দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে বহু প্রজন্মের উত্তরাধিকার বহনকারী ১২৬তম বোল্লা কালি পুজা ও বৌ মেলার বর্ণিল উদ্বোধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। রাস পূর্ণিমার পরের ...
দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে বহু প্রজন্মের উত্তরাধিকার বহনকারী ১২৬তম বোল্লা কালি পুজা ও বৌ মেলার বর্ণিল উদ্বোধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। রাস পূর্ণিমার পরের শুক্রবারকে কেন্দ্র করে আয়োজিত এই ঐতিহ্যবাহী উৎসব এখন শুধু ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, বরং স্থানীয় সংস্কৃতি, ইতিহাস ও লোকজ ঐতিহ্যের মিলনমেলা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
১০ দিনব্যাপী এই মেলা শনিবার (৮ নভেম্বর) বিকেলে ফুলবাড়ী পুজা উদযাপন কমিটির আয়োজনে পুজা ও মেলার উদ্বোধন করেন, বাংলাদেশ ধর্ম মন্ত্রণালয়ের হিন্দু কল্যাণ ট্রাস্টের ট্রাস্টি অধ্যাপক পরিতোষ চক্রবর্তী। পুজা উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক আনন্দ কুমার গুপ্তার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উদ্বোধনী পর্বে মন্দির কমিটির সদস্য সচিবসহ কমিটির অন্যান্য সদস্য এবং স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।
উদ্বোধনের পর থেকেই মেলা প্রাঙ্গণে বাড়তে থাকে মানুষের ভিড়। বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষ, শিশু, বয়স্কসহ হাজারো মানুষ মেলার বিভিন্ন আয়োজন উপভোগ করতে আসেন। মেলায় বসেছে গ্রামের ঐতিহ্যবাহী পণ্যের দোকান, খেলনা, খাবার, মিষ্টির স্টল, সাংস্কৃতিক আয়োজন ও লোকজ বিনোদনের নানা ব্যবস্থা।
১২৬ বছরের ধারাবাহিকতায় এ পুজা ও মেলা শুধু ধর্মীয় উৎসবেই সীমাবদ্ধ নয়; এটি হয়ে উঠেছে সামাজিক মিলনমেলা। প্রতিবছর দিনাজপুরসহ পাশের জেলা থেকে হাজারো শ্রদ্ধাভক্ত ও দর্শনার্থী এখানে সমবেত হন।
মেলা কমিটির আহ্বায়ক আনন্দ কুমার গুপ্তা বলেন, রাস পূর্ণিমার পরের শুক্রবারই আমাদের এই বোল্লা কালি পুজা হয়। এই পুজাকে কেন্দ্র করে টানা ১০ দিন মেলা চলে। ১২৬ বছর ধরে এই ঐতিহ্য আমরা ধরে রেখেছি। নারী-পুরুষ সবার অংশগ্রহণে মেলাটা জমে ওঠে।
তিনি আর বলেন, আমরা প্রতিবছর শান্তিপূর্ণভাবে আমাদের ধর্মীয় কর্ম সম্পন্ন করি। মেলায় আগত দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রশাসন ও আমাদের কমিটি সক্রিয়ভাবে কাজ করছে।
স্থানীয় দর্শনার্থী শোভন কুমার বলেন, এই মেলা আমাদের গ্রামের প্রাণ। ছোটবেলা থেকে দেখে আসছি, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই এখানে একসঙ্গে আনন্দ করে। গ্রামীণ ঐতিহ্যের স্বাদ এখনো এখানে অক্ষুণ্ণ আছে।
দিনাজপুর শহর থেকে আসা দর্শনার্থী মঞ্জুশ্রী রায় বলেন, প্রতি বছরই পরিবারের সবাই নিয়ে বোল্লা কালি পুজায় আসি। মেলার লোকজ আমেজ, মানুষের ভিড়, পুজার পরিবেশ, সব মিলিয়ে এখানে এক ধরনের শান্তি পাওয়া যায়। এবার দোকানপাট ও আয়োজন আরও বড় হয়েছে।
ঘোড়াঘাট থেকে মেলায় আসা রফিকুল ইসলাম বলেন, এ মেলায় শুধু ধর্মীয় আচার নয়, আমাদের গ্রামের পুরনো সংস্কৃতি, খেলাধুলা, খাবার, সব কিছুর সমাবেশ হয়। এটা এখন আর শুধু একটি এলাকার উৎসব নয়, পুরো জেলার মানুষের মিলনমেলা।
রঙ, আলো, ভক্তি আর উৎসবের উচ্ছ্বাসে মুখর বোল্লা কালি পুজা ও বৌ মেলা আজও ধরে রেখেছে দিনাজপুরের লোকজ সংস্কৃতির শিকড়। শতবর্ষী এ আয়োজন কেবল একটি উৎসব নয়, বরং মানুষের বিশ্বাস, ঐতিহ্য ও সম্প্রীতির এক উজ্জ্বল প্রতীক হিসেবে টিকে আছে অবিচলভাবে।
মোকছেদুল মমিন মোয়াজ্জেম।

কোন মন্তব্য নেই