Page Nav

HIDE

Grid

GRID_STYLE

Hover Effects

TRUE
{fbt_classic_header}

Header Ad

ব্রেকিং নিউজ

latest

Ads Place

জয়পুরহাটে তিনটি হিমাগার থেকে গোপনে ৫০ হাজার বস্তা আলু বিক্রি

জয়পুরহাটের তিনটি হিমাগার থেকে কৃষক ও ব্যবসায়ীদের না জানিয়ে গোপনে ৫৫ হাজার বস্তা আলু বিক্রির ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে প্রায় ১০ হাজার বস্তা বীজ আল...

জয়পুরহাটের তিনটি হিমাগার থেকে কৃষক ও ব্যবসায়ীদের না জানিয়ে গোপনে ৫৫ হাজার বস্তা আলু বিক্রির ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে প্রায় ১০ হাজার বস্তা বীজ আলু ছিল।

হিমাগারে সংরক্ষিত আলু তুলতে এসে আলু বিক্রির বিষয়টি জানতে পারেন ভুক্তভোগী কৃষক ও ব্যবসায়ীরা। ঘটনাটি নিজে তদন্ত করার কথা জানিয়েছেন জেলা কৃষি বিপণন কর্মকর্তা।

হিমাগার তিনটি হলো পাঁচবিবি উপজেলার চানপাড়া এলাকার ‘সাথী হিমাগার লিমিটেড’, ক্ষেতলাল উপজেলার ভাসিলা এলাকার ‘মোল্লা হিমাগার লিমিটেড’ ও একই উপজেলার আয়মাপুরের ‘হাফিজার রহমান বীজ হিমাগার’। এর মধ্যে সাথী হিমাগার প্রায় ২০ হাজার বস্তা, মোল্লা হিমাগার ৩০ হাজার বস্তা ও হাফিজার রহমান হিমাগার প্রায় ৫ হাজার বস্তা আলু কৃষকদের না জানিয়ে বিক্রি করেছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার সরেজমিনে একটি হিমাগারে গিয়ে আলু বিক্রির ঘটনার সত্যতা পাওয়া যায়। এখন হিমাগারগুলো বর্তমান বাজারমূল্য অনুযায়ী কৃষক ও ব্যবসায়ীদের টাকা দিয়ে বিষয়টি রফাদফা করার চেষ্টা করছে। আর যাঁরা বীজ আলু হারিয়েছেন, তাঁদের হিমাগারের নিজস্ব বীজ আলু থেকে দেওয়ার চেষ্টা চলছে।

গতকাল দুপুরে পাঁচবিবির সাথী হিমাগারে গিয়ে দেখা যায়, সংরক্ষণ করা আলু না পেয়ে কৃষকেরা হিমাগারের ব্যবস্থাপকের কক্ষে ভিড় করছেন। এ সময় কৃষকেরা হিমাগারের ব্যবস্থাপকের সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডায় জড়ান। ভুক্তভোগী কয়েকজন কৃষক জানান, তাঁরা সাথী হিমাগারে আলু সংরক্ষণ করেছিলেন। ১৫ নভেম্বর সংরক্ষণের মেয়াদ শেষ হবে। আজ আলু নিতে এলে প্রথমে হিমাগার কর্তৃপক্ষ তাঁদের দীর্ঘক্ষণ বসিয়ে রাখেন। পরে এক মাস আগে হিমাগার থেকে ২০ হাজার বস্তা আলু বিক্রির কথা তাঁদের জানানো হয়।

সাথী হিমাগারে ৬০ বস্তা আলু রেখেছিলেন গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার দেওনালা গ্রামের কৃষক ময়নুল ইসলাম। গতকাল আলু তুলতে এসে জানতে পারেন, তাঁর আলু এক মাস আগে গোপনে বিক্রি করা হয়েছে। ময়নুল ইসলাম বলেন, ‘হিমাগার কর্তৃপক্ষ আমাকে আলু বিক্রির বিষয়টি আগে জানায়নি। এ ছাড়া আলু সংরক্ষণের মেয়াদ ছিল। এটা মগের মুল্লুক নাকি? আমার আলু ফেরত দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।’

পাঁচবিবির চনপাড়া এলাকার কৃষক জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমি সাথী হিমাগারে ১০০ বস্তা বীজ আলু সংরক্ষণ করেছিলাম। আলু রোপণের জন্য জমি প্রস্তুত করেছি। আজ হিমাগারে এসে দেখি, আমার আলু নেই। কাগজপত্র দেখে হিমাগারের ব্যবস্থাপক জানালেন, এক মাস আগে আমার আলু বিক্রি করা হয়েছে। এখন আমি কীভাবে জমিতে আলু লাগাব?’

জানতে চাইলে সাথী হিমাগার লিমিটেডের ব্যবস্থাপক শামসুল হক বলেন, চলতি বছর হিমাগারে ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত ২৬ হাজার বস্তা আলু কৃষকেরা জোর করে রেখেছিলেন। এ জন্য কিছু আলু নষ্ট হতে শুরু করেছিল। তাঁরা প্রায় ২০ হাজার বস্তা আলু বিক্রি করেছেন। আলু উত্তোলনের জন্য হিমাগার থেকে নোটিশ করা হয়েছিল বলে তিনি দাবি করেন। তিনি বলেন, তাঁরা এখন কৃষকদের বর্তমান বাজারমূল্য অনুযায়ী টাকা দিচ্ছেন। কেউ বীজ আলু চাইলে তাঁদের হিমাগারে সংরক্ষিত কিছু বীজ আলু দেওয়া হচ্ছে।

জয়পুরহাট জেলা কৃষি বিপণন কর্মকর্তা মেহেদী হাসান বলেন, এখন পর্যন্ত তিনটি হিমাগারের বিরুদ্ধে কৃষক ও ব্যবসায়ীদের আলু বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। কৃষকদের না জানিয়ে আলু বিক্রি করা অপরাধ। বিষয়টি তিনি নিজে তদন্ত করছেন। তিনি জানান, মোল্লা হিমাগার স্থানীয় ব্যবসায়ীদের ৩০ হাজার বস্তা আলু বিক্রি করেছে। এখন তাঁদের বর্তমান বাজারমূল্য অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ দিচ্ছে হিমাগার কর্তৃপক্ষ।

মোল্লা হিমাগারের ব্যবস্থাপক মোস্তাফিজার রহমান বলেন, যেসব ব্যবসায়ীর অনেক বেশি আলু সংরক্ষিত আছে, তাঁদের অনুমতি নিয়ে অর্ধেক আলু বিক্রি করেছেন তাঁরা। আলুর পরিবর্তে বর্তমান বাজারদর অনুযায়ী তাঁদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হচ্ছে। কতজন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে অনুমতি নিয়েছেন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘আমরা বড় বড় ৪৫ জন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে লিখিত অনুমতি নিয়ে আলু বিক্রি করেছি।’

অন্যদিকে হাফিজার রহমান বীজ হিমাগারের ব্যবস্থাপক বেলাল সরদার বলেন, ‘আমরা ব্যবসায়ীদের রাখা ৪ হাজার ৮০০ বস্তা আলু বিক্রি করেছি।’ সংরক্ষণের মেয়াদ শেষের আগে কেন বিক্রি করলেন জানতে চাইলে বলেন, ‘হিমাগারে অনেক বেশি আলু ছিল। আগে আলু বিক্রি না করলে শেষ পর্যন্ত সব আলু হিমাগার থেকে বের করা কষ্টসাধ্য হবে বলে না জানিয়ে কিছু আলু বিক্রি দিয়েছি। এখন ব্যবসায়ীদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হচ্ছে।’

বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা হিমাগার মালিকদের চিঠি দিয়ে জানিয়েছি, চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে অর্থাৎ নভেম্বরের ১৫ তারিখের আগে যেন কোনো কৃষকের আলু বিক্রি না করে। এখন যাঁরা আলু বিক্রি করেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে কৃষকেরা লিখিত অভিযোগ দিলে আমরা কঠোর ব্যবস্থা নেব।’

জয়পুরহাট আদালতের আইনজীবী নাফিউজ্জামান তালুকদার বলেন, কৃষক ও ব্যবসায়ীদের সংরক্ষিত আলু তাঁদের না জানিয়ে বিক্রি করে হিমাগার কর্তৃপক্ষ ৪০৬ ধারায় অপরাধ করেছে। কেউ মামলা করতে চাইলে মামলা করতে পারবেন।

রবিউল ইসলাম রুবেল।

 

কোন মন্তব্য নেই

Ads Place