জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার বৈরাগীহাট মোড়ে ছোট্র পরিসরে নাসরিন তার বাবার হোটেলে প্রায় ৬ বছর ধরে খাবার তৈরি এবং হোটেল পরিচালনা করছেন এক মেধাবী ...
জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার বৈরাগীহাট মোড়ে ছোট্র পরিসরে নাসরিন তার বাবার হোটেলে প্রায় ৬ বছর ধরে খাবার তৈরি এবং হোটেল পরিচালনা করছেন এক মেধাবী শিক্ষার্থী নাসরিন আক্তার (১৮)। ১২ বছর আগে হোটেলটি চালু করেছিলেন তার বাবা মোকাব্বর মন্ডল (৫৫)।
নাসরিন এসএসসি পরীক্ষায় পেয়েছিলেন এ প্লাস। সে বর্তমানে উপজেলার কালাই সরকারি মহিলা ডিগ্রী কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী। নাসরিন এই হোটেল চালিয়েই সংসার ও পড়াশুনার খরচ চালান। বাবাকে সাহায্য করতেই এই মেধাবী শিক্ষার্থী বাবার সাথে চালিয়ে যাচ্ছেন খাবার হোটেলটি।
নিজেই তৈরী করছেন পুড়ি, পিয়াজু, সিঙ্গারা, ছামুচা,মোগলাই, চানাচুর। রান্না করছেন ভাত, মাছ,মাংসসহ হরেক রকমের তরকারি। আবার নিজেই করছেন খাবার পরিবেশন।
স্বল্প মূল্যে সু-স্বাদু খাবার পরিবেশন করায় বিভিন্ন এলাকার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে গ্রাহকরা ছুটে আসে তার বাবার হোটেলে। খাবার খেতে আসা গ্রাহকরা বলছেন এই হোটেলের খাবার দামে কম মানে ভালো ও সুস্বাদু।
হোটেল এ খাবার খেতে আসা ট্রাকচালক হাফিজুল ইসলাম জানান, তার বাড়ি বগুড়া। সে এই এলাকায় মাঝে মধ্যেই আসে, এই হোটেলে খাইতে আসেন খাবারের মান ভালো, রান্নাটাও অনেক ভালো।
খাবার খেতে মোখলেছুর রহমান, আমির হোসেন, আবুল কাশেমসহ অনেকে জানান, তাদের মাঝে মধ্যে এইদিকে কাজের প্রয়োজনে আসতে হয়। অনেক সময় খাবার দরকার হলে তারা এই হেটেলে বসেন। কারন মেয়ে অনেক শান্ত ও ভদ্র। খাবারের মানও ভাল।
নাসরিন হোটেলের পাশের মুদি দোকানী জিহাদুল ইসলাম বলেন, তাদের হোটেলে আর্থিক সমস্যার কারণে তার কোন কারিগর বা মেসিয়ার রাখতে পারেনা। বিধায় মেয়ে হয়েও সে তার বাবার হোটেলের যাবতীয় সবকিছু বানায়। সে পড়াশোনা আবার মেধাবী ছাত্রী।
কলেজ শিক্ষার্থী নাসরিন আক্তার জানান, সে মাধ্যমিকে কোন প্রকার প্রাইভেট পড়ে নাই। এখন বর্তমানে কালাই সরকারি মহিলা ডিগ্রী কলেজে এইচ এস সি বিজ্ঞান বিভাগের ২য় বর্ষের ছাত্রী। সে ভোরবেলায় হোটেলের কাজ করে কলেজে যায়। আবার কলেজ ছুটি দিলে ৩ টার দিকে চলে আসে এবং বিকাল ৪ টা থেকে রাত ১০ টা পর্যন্ত হোটেলের এসব কাজ করে। অর্থের যোগান দিতে না পাড়ায় মা -বাবার কাজে সাহায্যের জন্য এগুলা কাজ করতে হয় তাকে।
নাসরিন আক্তারের বাবা মোকাব্বর মন্ডল বলেন, আমার মেয়ে কালাই মহিলা কলেজ পড়ে। সকালে হোটেলে কাজ রেখে যায়। আবার কলেজ থেকে ফিরে রাত প্রায় ১০টা পর্যন্ত সে কাজ করে। আমি গরিব মানুষ কোন কারিগর রাখতে পারিনাই। আমার মেয়েই সহযোগিতা করে।
কালাই সরকারি মহিলা ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ নাজিম উদ্দিন বলেন, সে তার বাবার হোটেলে কাজ করে লেখাপড়া চালায়। মেয়েটা খুব মেধাবী। কলেজের পক্ষে থেকে তাকে সাধ্যেমতে সহযোগীতা করা হচ্ছে। আগামী দিনে নাররিন তার স্বপ্ন পূরণ করবে বলে তিনি আশাবাদ করেন।
এ বিষয়ে কালাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) শামিমা আক্তার জাহান বলেন, বৈরাগীর মোড়ে নাসরিন হোটেলে নাসরিন নামে যে মেয়েটির কথা শুনলাম সে তার পড়ালেখার পাশাপাশি বাবার সাথে হোটেলে কাজ করছে এটা একটা চমৎকার উদ্যোগ। তবে তার পড়ালেখার যেন ক্ষতি না হয় এই কাজটা করতে যেয়ে। সেজন্য তাকে যতটুকু আর্থিক সহযোগিতা আমাদের উপজেলা প্রশাসন থেকে করা প্রয়োজন সেটা আমরা করবো।
এ টি এম সেলিম সরোয়ার।
কোন মন্তব্য নেই