আজিজুল বারি। বয়স ৫৫। ভূমিহীন, গৃহহীন একজন কাঁঠাল পাতা বিক্রেতা। দীর্ঘ এগারো বছর ধরে, কাঁঠালের পাতা বিক্রি করেন তিনি। কাঁঠাল পাতা বিক্রি করে ...
আজিজুল বারি। বয়স ৫৫। ভূমিহীন, গৃহহীন একজন কাঁঠাল পাতা বিক্রেতা। দীর্ঘ এগারো বছর ধরে, কাঁঠালের পাতা বিক্রি করেন তিনি। কাঁঠাল পাতা বিক্রি করে যে লাভ হয়, সেই টাকায় চলে তার সংসার। আজিজুল বারি জানান, স্ত্রী গণি বেগমকে নিয়ে তিনি বসবাস করেন, জয়পুরহাট জেলা সদরের আদর্শ পাড়া মহল্লায় । নিজের কোন জায়গা জমি নাই। থাকেন, সরকারি জায়গায়। সেটা ঠিক বাড়ি নয়। টিন দিয়ে ঘেরাও করা, টিনের ছাওনি দেওয়া একটি ঘর। যে ঘরে গরমের সময় প্রচণ্ড গরম। আর শীতের সময় তীব্র শীত। তিনি আরও জানান, দাম্পত্য জীবনে তিনি তিন সন্তানের বাবা। এক ছেলে আর দুই মেয়ে। প্রত্যেকেরই বিয়ে দিয়েছেন। টাকার অভাবে মেয়েদের ভালো ঘরে বিয়ে দিতে পারেননি। ছেলের ক্ষেত্রেও তাই। বিয়ের পর থেকেই ছেলে তার স্ত্রীকে নিয়ে আলাদা থাকেন, আলাদা খান। জয়পুরহাট কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠের পশ্চিম পাশে বাংলাদেশ রেলওয়ের জায়গায় তার কাঁঠাল পাতার দোকান। সেখানে প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে শুরু করে, রাত ৯টা পর্যন্ত চলে তার বেচাকেনা। পাইকারিতে কাঁঠাল পাতার আটি কিনে নিয়ে খুচরায় বিক্রি করেন তিনি। প্রতি একশো আটি তিনি ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা দরে কিনেন। পরে দিনভর সেগুলো বিক্রি করেন। প্রতি আটি বিক্রি করেন ১১ থেকে ১২ টাকায়।
কাঁঠাল পাতা বিক্রেতা আজিজুল বারি জানান, লকডাউনের আগে প্রতিদিন তিনি কাঁঠাল পাতার আটি বিক্রি করতেন ১৫০ থেকে ২০০টি। তখন কাঁঠাল পাতা বিক্রি করে দিন শেষে তার লাভ থাকতো ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা। কিন্তু লকডাউন দেওয়ায় এখন ভয়ে ভয়ে ক্রেতারা আসছেন না। তাই বর্তমানে তিনি প্রতিদিন ১০০ থেকে ১১০টি কাঁঠাল পাতার আটি বিক্রি করতে পারেন । ফলে এখন দিন শেষে তার লাভ থাকে ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা। লকডাউনের প্রভাবে এখন তার সংসার চালানো কষ্টকর হয়ে পড়েছে।
পাতা বিক্রির লাভের টাকা দিয়েই চাল,ডালসহ নিত্য দিনের খরচ করেন তিনি। এতেই তিনি পরম সুখী। আজিজুল বারির আক্ষেপ। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত ভূমিহীন, গৃহহীনই থেকে গেলেন তিনি। সরকারি জায়গাতে বসবাস করেই কেটে গেল সারা জীবন। সরকারের কাছে তার একটিই চাওয়া। একখণ্ড জমি। একটি বাড়ি। যা তিনি নিজের বলে দাবি করতে পারবেন।
কাঁঠাল পাতা কিনতে আসা শহরের সুগার মিল এলাকার এফ তাইফ কলোনির আব্দুল আজিজ জানান, শহরে বসবাস করেও ছাগল পালন করা সহজ হয়েছে আজিজুল বারির জন্য। তার দোকান থেকে প্রতিদিনই তিনি ৫ থেকে ৬ আটি কাঁঠাল পাতা কিনেন।
ভূমিহীন আজিজুল বারির জন্য সরকারি কোন জায়গা জমি বন্দোবস্ত করা যায় কিনা। এমন প্রশ্নের জবাবে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরাফাত রহমান জানান, সরকার ভূমিহীন, গৃহহীনদের জন্য আন্তরিক। তার বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া হবে। তাতে যোগ্য বলে বিবেচিত হলে, সরকারি আশ্রয়ন প্রকল্পের আওতায় তার জন্য জমি এবং ঘর বরাদ্দ দেওয়া হবে।
এ বিষয়ে সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এস.এম সোলায়মান আলী জানান, আজিজুল বারি যদি প্রকৃত ভূমিহীন হোন। আর তার নির্বাচনী এলাকার বাসিন্দা হোন। তাহলে তদন্ত করে, তাকে সরকারি প্রকল্পের আওতায় ঘর বরাদ্দ দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।
মো. আতাউর রহমান/ডেইলি জয়পুরহাট
কোন মন্তব্য নেই