Page Nav

HIDE

Grid

GRID_STYLE

Hover Effects

TRUE
{fbt_classic_header}

Header Ad

ব্রেকিং নিউজ

latest

Ads Place

৭৮ বছর বয়সী প্রতিবন্ধী মেহেরুন নেছার জীবন এক করুণ অধ্যায়

দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলার সিংড়া ইউনিয়নের বিরাহিমপুর গ্রামের এক প্রান্তে ফসলের মাঠের পাশে ছোট্ট এক কুঁড়ে ঘর। ঘরের টিন মরিচায় ক্ষয়ে গেছে, দেও...

দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলার সিংড়া ইউনিয়নের বিরাহিমপুর গ্রামের এক প্রান্তে ফসলের মাঠের পাশে ছোট্ট এক কুঁড়ে ঘর। ঘরের টিন মরিচায় ক্ষয়ে গেছে, দেওয়াল ফেটে পড়ছে, বাঁশের খুঁটিগুলো কাঁপছে হালকা বাতাসেই। সেই ঝুপড়ি ঘরেই কাটছে ৭৮ বছর বয়সী জন্ম প্রতিবন্ধী মেহেরুন নেছার জীবন। নেই স্বামী, নেই সন্তান, নেই এমন কেউ, যে একমুঠো ভাত তুলে দেবে তার হাতে বা একটি সান্ত্বনার কথা বলবে পাশে বসে।

বাবা-মার রেখে যাওয়া এই কুঁড়ে ঘরই এখন তার শেষ আশ্রয়। জীবনের সব আলো নিভে গেছে বহু আগেই। শরীরের শক্তি হারিয়েছেন, আর এখন চোখেও আলো নেই। এক সময় হামাগুড়ি দিয়ে চলাফেরা করতেন, এখন সেটাও কষ্টকর হয়ে পড়েছে। বয়সের ভারে নুয়ে পড়া শরীর, ক্ষুধা আর অন্ধকারে কাটছে দিন-রাত।

ছোটবেলা থেকেই এমনই আছি। বাবা-মা বেঁচে থাকতেই একটু যত্ন পেতাম। তারা মারা যাওয়ার পর থেকে আর কেউ নেই আমার পাশে। প্রতিবন্ধী ভাতার টাকা পাই, কিন্তু তা দিয়ে চলে না কিছুই। ঘরটা প্রায় ভেঙে পড়ছে। যদি সরকার একটা ঘর দিতো, তাহলে শান্তিতে মরতে পারতাম, বলছিলেন কণ্ঠ কাঁপিয়ে মেহেরুন নেছা।

গ্রামের মানুষ জানে তার দুর্দশার গল্প। প্রতিবেশী আক্কাস আলী বলেন, ছোটবেলা থেকে এই অসহায় মেহেরুন নেছাকে দেখে আসছি। হামাগুড়ি দিয়ে চলেন, চোখেও দেখতে পান না। নিজের মতো করে কষ্টে বেঁচে আছেন। কেউ তার দেখাশোনা করে না, অথচ তিনি খুবই অসহায়।

গ্রামবাসী রেজিয়া বেগম ও আয়েশা খাতুন জানান,

তিনি জন্ম থেকেই প্রতিবন্ধী। বাবা-মার রেখে যাওয়া ঘরটা এখন ভেঙে যাচ্ছে। একা একা থাকেন, কেউ পাশে নেই। চেয়ারম্যান, মেম্বাররা আসেন, দেখে যান, কিন্তু ঘরের কোনো ব্যবস্থা করেন না। উনি বেঁচে আছেন মানুষের দয়ার ওপর।

এ গ্রামের মোরছালিন হক ও আইজুল ইসলাম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমরা গ্রামবাসী মিলে কখনো খাবার দিই, কখনো ওষুধ কিনে দিই। কিন্তু সরকারিভাবে কিছুই পাননি এই অসহায় বৃদ্ধা। অন্যরা সরকারি ঘর পায়, কিন্তু উনাকে কেউ দেয় না। বয়স, অন্ধত্ব আর একাকীত্বে উনি প্রতিদিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন। সরকার যেন তার জন্য একটা ঘর দেয়, এটাই আমাদের একমাত্র চাওয়া।

এমন হৃদয়বিদারক খবর জানার পর ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার রফিকুল ইসলাম বলেন,

সংবাদ পেয়ে আমি ওই বৃদ্ধা প্রতিবন্ধীর বাড়িতে গিয়েছি। কিছু খাদ্যসামগ্রী দিয়েছি এবং একটি এনজিও’র মাধ্যমে তার জন্য একটি ঘর নির্মাণের ব্যবস্থা করছি। তার মতো অসহায় মানুষদের পাশে আমরা সবসময় থাকার চেষ্টা করছি।

গ্রামবাসীর মতে, যদি মেহেরুন নেছা একটু নিরাপদ আশ্রয় পেতেন, তাহলে হয়তো জীবনের শেষ প্রহরগুলো শান্তিতে কাটাতে পারতেন। এখনো তিনি আশায় বসে আছেন। হয়তো একদিন সরকার বা সমাজের কেউ এগিয়ে আসবে, মুছে দেবে তার কষ্টের ইতিহাস।

মোকছেদুল মমিন মোয়াজ্জেম।

 

কোন মন্তব্য নেই

Ads Place