জয়পুরহাটের ক্ষেতলালে হোপপিরহাট দাখিল মাদ্রাসায় ফ্যাসিস্ট আমলে অর্থের বিনিময়ে ভুয়া নিয়োগের অভিযোগে স্থানীয় জনমনে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। গত ১৭ আগ...
জয়পুরহাটের ক্ষেতলালে হোপপিরহাট দাখিল মাদ্রাসায় ফ্যাসিস্ট আমলে অর্থের বিনিময়ে ভুয়া নিয়োগের অভিযোগে স্থানীয় জনমনে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। গত ১৭ আগস্ট ওই প্রতিষ্ঠানে একটি নিয়োগ বোর্ড মাধ্যমে এফতেদায়িকারী ও ল্যাব সহকারী পদে দুইজনকে যোগদান দেখানো হয়। পরবর্তীতে বিষয়টি জানাজানি হলে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ ও তদন্ত কমিটি গঠন করে। ওই তদন্ত প্রতিবেন সংশ্লিষ্ট দপ্তরে জমা দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
জানাগেছে, ওই মাদ্রাসার তৎকালীন সভাপতি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক খলিলুর রহমান ও ভারপ্রাপ্ত সুপার জহুরুল ইসলাম এর যোগসাজশে মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে একজন ইবতেদায়ী কারী শিক্ষক ও ল্যাব সহকারী পদে ডিজির প্রতিনিধির স্বাক্ষর জালিয়াতি করে নিয়োগ বোর্ড এবং ওই দুই শিক্ষকের নামে এমপিও ইনডেক্সে অন্তর্ভুক্ত করেন তাঁরা। ৫ আগস্টের পর ওই সভাপতি পদ বিলুপ্তি হলে ভুয়া নিয়োগ বোর্ডের ঘটনাটি এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে।
এঘটনায় স্থানীয়রা ওই অবৈধ নিয়োগ বোর্ড বাতিল চেয়ে বিভিন্ন দপ্তরে একাধিক অভিযোগ করেন, পরে স্থানীয় জনরোষ ও তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে তাদের বেতন-ভাতা বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ।
বেতন–ভাতা বন্ধ হওয়ায় নিয়োগপ্রাপ্তরা মরিয়া হয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তির মাধ্যমে প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু তাতেও বেতন উত্তোলন সম্ভব হয়নি। এরপর থেকেই তারা কিছু গণমাধ্যমে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন তথ্য দিয়ে "বেতন ভাতা না পেয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে দুই শিক্ষক" শিরনামে সংবাদ প্রচার করছেন বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।
এ ঘটনায় এবতেদায়ী প্রধান পদে নিয়োগপ্রাপ্ত আবুল খায়ের এর বিল পাইয়ে দেওয়ার প্রলোভনে ওই মাদ্রাসার অফিস সহায়ক, ফিরোজ হোসেন, দুই সহকারী শিক্ষক আমিনুল ইসলাম ও রুহুল আমিনকে সাক্ষী রেখে মোটা অংকের টাকা লেনদেনের চুক্তি হয়। সেই মোতাবেক নব নিয়োগপ্রাপ্ত প্রধান ওই অফিস সহায়ক ফিরোজকে নগদ পাঁচ লাখ টাকা প্রদান করেন। বাঁকী টাকা আদায়ের গ্যারান্টার হিসেবে তিনশত টাকা মূল্যের নন জুডিশিয়াল স্যাম্প এবং ফাঁকা ব্যাংক চেকে স্বাক্ষর নিয়ে রাখেন তিনি। তার লেনদেন সংক্রান্ত একটি অডিও ফোন আলাপ ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফাঁস হয়েছে।
অন্যদিকে ল্যাব সহকারী পদে নিয়োগপ্রাপ্ত রুবিনা বেগম গত ৫ আগস্ট যোগদান করেন। তবে সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ, আবেদন জমাদান ও বোর্ড গঠনের তারিখ সংক্রান্ত কোনো সঠিক তথ্য দিতে পারেননি।
স্থানীয় বিএনপি নেতা আবু সাঈদ বলেন, গত ১৭ আগস্ট সারাদেশ ছাত্র-জনতার আন্দোলনে স্তব্ধ হয়ে পড়ে। ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ও বন্ধ ছিল। সেই সময়ে মাদ্রাসার কেরানি ফিরুজের চক্রান্তে ভুয়া নিয়োগ বোর্ড গঠন করে। ওই তারিখে এই মাদ্রাসায় কোনো নিয়োগ বোর্ড বসেনি, ডিজি’র কোনো প্রতিনিধি দল আসেনি, এমনকি শিক্ষক-কর্মচারীরাও এ বিষয়ে কিছুই জানতেন না। আমি মাদ্রাসা বোর্ডের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি ল্যাব সহকারী পদে কারী আব্দুল খায়ের এর ঘুষ লেনদেনের অডিও ইতোমধ্যে ফাঁস হয়েছে। দ্রুত তদন্ত করে এই দুইজন, ল্যাব গবেষণাগার সহকারী ও কারী শিক্ষক নিয়োগ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি।
ক্ষেতলাল উপজেলা মাধ্যমিক একাডেমিক সুপারভাইজার বাবুল কুমার সাহা বলেন, ওই মাদ্রাসায় এক বছরেরও বেশি সময় ধরে নিয়োগ ও বেতন-ভাতার জটিলতা চলছে। বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হলেও সমাধান হয়নি।
আবু হাসান।
কোন মন্তব্য নেই