Page Nav

HIDE

Grid

GRID_STYLE

Hover Effects

TRUE
{fbt_classic_header}

Header Ad

ব্রেকিং নিউজ

latest

Ads Place

জয়পুরহাটে ইউনিয়ন পরিষদে ফিরতে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন আ'লীগপন্থি চেয়ারম্যানরা

জয়পুরহাটে অনুপস্থিত থাকা ইউনিয়ন পরিষদের আওয়ামী লীগপন্থি চেয়ারম্যানরা স্বপদে ফেরার চেষ্টার করছেন। ইতোমধ্যে কয়েকজন আবেদনও করেছেন। জেলা প্রশাসক...

জয়পুরহাটে অনুপস্থিত থাকা ইউনিয়ন পরিষদের আওয়ামী লীগপন্থি চেয়ারম্যানরা স্বপদে ফেরার চেষ্টার করছেন। ইতোমধ্যে কয়েকজন আবেদনও করেছেন। জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার শাখা সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে জানা গেছে। 

গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর জেলার পাঁচ উপজেলার ৩২টি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) মধ্যে ২২টিতে চেয়ারম্যান নেই। এই ইউনিয়নগুলোতে প্যানেল চেয়ারম্যান ও প্রশাসক ওই পদে দায়িত্ব পালন করছেন। চেয়ারম্যানদের অনুপস্থিত ও পদত্যাগ জনিত কারণ দেখিয়ে তাদের এই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বিএনপির দলীয় পদে আছেন অথবা বিএনপি সমর্থিত ইউপি সদস্যরা প্যানেল চেয়ারম্যান হিসেবে অগ্রাধিকার পেয়েছেন। যে ১০টি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আছেন তাদের মধ্যে ৭ জন বিএনপি সমর্থিত। অন্যরা, আওয়ামী লীগের। একটি ইউনিয়ন পরিষদে আবার চারজন ইউপি সদস্যও দীর্ঘদিন ধরে অনুপস্থিত রয়েছেন।

জেলা প্রশাসনের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, একজন ইউপি চেয়ারম্যান কারাগারে আছেন। অন্যরা সবাই জামিনে বাইরে আছেন। তাদেরকে অনুপস্থিত দেখিয়ে একটিতে প্রশাসক ও অন্যগুলোতে প্যানেল চেয়ারম্যানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তাদের কাউকে বরখাস্তও করা হয়নি। তারা স্বপদে ফিরলে সংঘাত সৃষ্টি হতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে।

জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার শাখার তথ্য বলছে, জেলার পাঁচটি উপজেলায় ৩২টি ইউনিয়ন পরিষদ রয়েছে। এরমধ্যে জয়পুরহাট সদর উপজেলায় ৯টি, পাঁচবিবি উপজেলায় ৮টি, আক্কেলপুর উপজেলায় ৫টি, ক্ষেতলাল উপজেলায় ৫টি ও কালাই উপজেলায় ৫টি। সদর উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন পরিষদের মধ্যে শুধু ধলাহার ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যান রয়েছে। অন্য ইউনিয়নগুলোতে চেয়ারম্যান নেই। 

এরমধ্যে জামালপুর ও বম্বু ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদত্যাগ করেছেন। বাকি ৬ ছয় জন চেয়ারম্যান অনুপস্থিত। ওই ৮টি ইউনিয়ন পরিষদে প্যানেল চেয়ারম্যানরা দায়িত্ব পালন করছেন। পাঁচবিবি উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের মধ্যে ছয়টিতে চেয়ারম্যান রয়েছে। কুসুম্বা ও মোহাম্মদপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অনুপস্থিত রয়েছেন। এই দুটি ইউনিয়নে প্যানেল চেয়ারম্যান দায়িত্ব পালন করছেন। আক্কেলপুর উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের মধ্যে ৩টি ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যান রয়েছে। রুকিন্দীপুর ও তিলকপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অনুপস্থিত রয়েছেন। তিলকপুর ইউনিয়নে প্রশাসক ও রুকিন্দীপুর ইউনিয়নে প্যানেল চেয়ারম্যান দায়িত্ব পালন করছেন। আক্কেলপুর উপজেলা ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনার মোছা. মুনিরা সুলতানা তিলকপুর ইউনিয়নের প্রশাসকের দায়িত্বে আছেন। কালাই উপজেলার ৫টি ইউপির চেয়ারম্যানদের সবাই অনুপস্থিত। ওই ইউপিগুলোতে প্যানেল চেয়ারম্যানরা দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া ক্ষেতলাল উপজেলার ৫টি ইউপির চেয়ারম্যানরা সবাই অনুপস্থিত। ওই ইউপিগুলোতেও প্যানেল চেয়ারম্যানরা দায়িত্ব পালন করছেন।

প্রশাসনের এই দপ্তর সূত্র জানায়, চেয়ারম্যান না থাকা ২২টি ইউপির মধ্যে ২০টির চেয়ারম্যান অনুপস্থিত। এরমধ্যে ৬টি ইউপি ক্ষেতলালের বড়াইল, মামুদপুর, বড়তারা, তুলসীগঙ্গা, আক্কেলপুরের তিলকপুর ও কালাইয়ের উদয়পুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা স্বপদে ফেরার জন্য আবেদন করেছেন। তাদের সকল নথিপত্র ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অনুপস্থিত থাকা বেশির ভাগ ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে মামলা আছে। তারা আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পদে রয়েছেন। অনেকেই জামিনে আছেন এবং এলাকায় অবস্থান করছেন। বিভিন্ন আশঙ্কায় তারা ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে যাচ্ছেন না। তবে স্বপদে ফিরতে তারা চেষ্টা চালাচ্ছেন। এখন ইউনিয়ন পরিষদগুলোতে বিএনপিপন্থী ইউপি সদস্যরা একচ্ছত্র আধিপত্য বিরাজ করছে। আওয়ামীপন্থী ইউপি সদস্যরা কোণঠাসায় রয়েছেন। গত ৫ আগস্টের পর বম্বু ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জেলা আওয়ামী লীগের মোল্লা সামছুল আলম ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করেছেন। জামালপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাসানুজ্জামান মিঠু পদত্যাগ করে সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছিলেন। তিনি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী হন। গত বছরের ৫ আগস্টের পর তিনি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের পদ থেকে অপসারিত হয়েছেন। পুরানাপৈল ইউপি চেয়ারম্যান খোরশেদ আলম অনুপস্থিত রয়েছেন। চেয়ারম্যানের অনুপস্থিতে ইউপির ২ নম্বর ওর্য়াডের সদস্য আরমান আলী ওরফে হিরো প্যানেল চেয়ারম্যানের দায়িত্বে পালন করছেন। এই ইউনিয়নের ৪জন ইউপি সদস্য ইউনিয়ন পরিষদে আসেন না।

আক্কেলপুর উপজেলার রুকিন্দীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আহসান কবির এপ্লব উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। তিনি নির্বাচিত হওয়ার পর প্রায় ৬ মাস স্বশরীরে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছেন। জয়পুরহাট-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদের সাবেক হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপনের সঙ্গে তার সর্ম্পকের অবনতি ঘটে। এ কারণে তিনি টানা প্রায় ৬ থেকে ৭ মাস এলাকায় ছিলেন না। চেয়ারম্যানের দায়িত্ব ও রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় ছিলেন। তখনও ওই ইউপিতে প্যানেল চেয়ারম্যান দায়িত্ব পালন করেছিল। ছাত্র-জনতার গণ অভ্যুত্থানের পর তিনি এলাকা ছাড়া হয়েছেন। রুকিন্দীপুর ইউনিয়নে প্যানেল চেয়ারম্যানের তালিকার তিন নম্বর থাকা সংরক্ষিত নারী সদস্য আইরিন এখন প্যানেল চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন। তিলকপুর ইউপি চেয়ারম্যান সেলিম মাহবুব সজল যুবলীগের সাবেক নেতা। তার বিরুদ্ধে দুটি মামলা হওয়ায় তিনি কয়েক মাস আত্মগোপনে ছিলেন। এসময় প্যানেল চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পাওয়া নিয়ে প্যানেলের তালিকায় থাকা তিন জন সদস্যের মধ্যে দ্বন্দ্ব হয়। কোনো সুরাহা না হওয়ায় উপজেলা ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনার মোছা. মনিরা সুলতানাকে তিলকপুর ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হয়। এখন ইউপি চেয়ারম্যান সেলিম মাহবুব সজল সবগুলো মামলায় জামিনে আছেন। তিনি এলাকায় অবস্থান করছেন। তবে স্বপদে ফিরতে পারেননি। 

পুরানাপৈল ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান আরমান আলী হিরো বলেন, আমি ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও ইউপির দুই নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য। গত বছরের ৩০ সেপ্টম্বর আমাকে প্যানেল চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আমি সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে দায়িত্ব পালন করছি। দলীয় নেতাদের পরার্মশ নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদ পরিচালনা করছি। এখন পর্যন্ত কোনো ঝামেলা হয়নি। ইউনিয়নবাসী অতীতের চেয়ে এখন সর্বোচ্চ সেবা পাচ্ছেন। আমাদের ইউনিয়নে প্যানেল চেয়ারম্যানদের তালিকা ছিল না। প্রশাসন আমাকে যোগ্য মনে করে প্যানেল চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দিয়েছেন।

তিলকপুর ইউপি চেয়ারম্যান সেলিম মাহবুব সজল বলেন, আমার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল। আদালত আমাকে জামিন দিয়েছেন। আমি কয়েক মাস ধরে এলাকায় অবস্থান করছি। আমি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবহিত করেছি। তবু আমি এখন অনুপস্থিত। আমাকে চেয়ারম্যানের দায়িত্বে ফেরানো হয়নি।

মামুদপুর ইউপি চেয়ারম্যান মশিউর রহমান বলেন, আমার বিরুদ্ধে দুটি মামলা হয়েছে। মামলা দুটিতেই জামিনে আছি। ইউনিয়নের স্বপদে বসতে আবেদন করেছি। আমার মতো আরও কয়েকজন আবেদন করেছেন।

স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক মো. সবুর আলী বলেন, ৩২টি ইউনিয়ন পরিষদের মধ্যে ১০টিতে চেয়ারম্যান রয়েছে। ২২টি ইউনিয়ন পরিষদের মধ্যে ২১টিতে প্যানেল চেয়ারম্যান ও একটিতে প্রশাসক দায়িত্ব পালন করছেন। ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রম স্বাভাবিক রয়েছে। ইতোমধ্যে কয়েকটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান স্বপদে ফেরার জন্য কাগজপত্র জমা দিয়েছেন। আমরা সেগুলো মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি।

চম্পক কুমার।

 

কোন মন্তব্য নেই

Ads Place