Page Nav

HIDE

Grid

GRID_STYLE

Hover Effects

TRUE
{fbt_classic_header}

Header Ad

ব্রেকিং নিউজ

latest

Ads Place

হারিয়ে যাচ্ছে মৃৎশিল্প, কষ্টে আছেন ক্ষেতলালের কারিগররা

কেউ তৈরি করছেন থালা, হাঁড়ি, পাতিল,কলস। কেউ আবার তৈরি করছেন মাটির পুতুল, ঘটি বাটি ও খেলনাসহ বিভিন্ন প্রকার সামগ্রী। বিভিন্ন আকার ও শৈলীতে তৈর...

কেউ তৈরি করছেন থালা, হাঁড়ি, পাতিল,কলস। কেউ আবার তৈরি করছেন মাটির পুতুল, ঘটি বাটি ও খেলনাসহ বিভিন্ন প্রকার সামগ্রী। বিভিন্ন আকার ও শৈলীতে তৈরি হচ্ছে এসব পণ্য। বলছি জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার দক্ষিণ হাটশহর পালপাড়া গ্রামের মৃৎশিল্পীদের কথা। যারা যুগ যুগ ধরে মাটি দিয়ে বিভিন্ন নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য তৈরি করে আসছেন।

জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলা থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে দক্ষিণ হাটশহর পালপাড়া গ্রাম। এই গ্রামেরই প্রায় ৫০টি পরিবার জীবন ও জীবিকার তাগিদে মৃৎশিল্পকে আঁকড়ে ধরে রেখেছেন বছরের পর বছর ধরে। কিন্ত মাটির অভাব, প্রয়োজনীয় পুঁজি ও পরিকল্পিত উদ্যোগের অভাবে চরম সংকটে দিন কাটাচ্ছেন তারা। মাটির তৈরি এসব সামগ্রীর ন্যায্যমূল্য না থাকায় এই শিল্পের সঙ্গে জড়িতরা অন্য পেশায় যেতে বাধ্য হচ্ছেন। এরপরও কিছু পরিবার এই পেশা আঁকড়ে ধরে রয়েছেন।

মাটির সঙ্গে এ গ্রামের মানুষের গভীর সম্পর্ক। কিন্তু এই মানুষগুলোর ভাগ্যের পরিবর্তন হচ্ছে না। প্রযুক্তির যুগে মাটির তৈরি বিভিন্ন জিনিসের জায়গা দখল করেছে স্বল্প দামের প্লাস্টিক ও লোহার তৈরি পণ্য। বাজারে মাটির তৈরি জিনিসপত্রের চাহিদা না থাকায় হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প। ফলে মানবেতর জীবনযাপন করছেন এর সঙ্গে সম্পৃক্ত কারিগররা। এসব পরিবারের অধিকাংশেরই মাঠে কোনো চাষযোগ্য জমি নেই। বসতভিটার মাত্র দুই এক কাঠা জমিই তাদের শেষ সম্বল।

বাড়ির উঠানে কিংবা পাশে ফাঁকা জায়গায় বসে মাটি দিয়ে বিভিন্ন প্রকার পণ্য তৈরি করছে হাটশহর পালপাড়া গ্রামের মানুষ। গ্রামের একাধিক বাসিন্দা জানান, সকাল থেকে শুরু হয় এসব পণ্য তৈরির কাজ। এরপর রোদে শুকানো, আগুনে পোড়ানো ও রং-তুলির সাহায্যে সৌন্দর্য বাড়ানো হয়। নারী-পুরুষরা সমানতালে এই কাজ করেন। তাদের সহযোগিতা করেন ছোট ছোট ছেলেমেয়েরাও।

বাড়ির বারান্দায় বসে কাজ করছিলেন শ্রীমতি দূর্গা রানী পাল। তিনি বলেন, এখন তো মাটির জিনিস বিক্রি হয়না। আগেকার মত বেচাকেনা নাই। সংসার চলেনা। স্বামীর সংসারে ২১ বছর ধরি এই কাম করি। স্বামী, বেটি দুইটা ও আমি এই কামই করি। তাও সংসার চলে না।

একই গ্রামের আর একটি বাড়ির উঠানে বসে কাজ করছিলেন শ্রীমতি শ্যামলী রানী পাল। তিনি বলেন আমাদের অনেক দুঃখ হয়। আগে যে ব্যবসা চলিচ্ছিল এখন আর চলেনা। এখন ব্যবসা নাই।

ওই গ্রামেরই অন্য একটি বাড়িতে উঠানে বসে মেয়েকে নিয়ে কাজ করছিলেন শ্রীমতি সুমিত্রা রানী পাল। তিনি বলেন,আমার ব্যবসা নাই এখন, নিন নাই এখন। হাট বাজার করে কোন রকমে চলিতে হয়।

মৃৎশিল্পী রাজেশ্বর চন্দ্র পাল বলেন, প্লাস্টিকের জিনিসপত্র বের হয়ে হামার মাটির জিনিস কেউ নেয় না। বছরে একবার পহেলা বৈশাখ, হিন্দুর বিয়া বাড়ি ও বিভিন্ন পূজার সময় একটু বেচাকেনা হয়। অন্য সময় তাও হয় না। এক সময় এই ব্যবসার যথেষ্ট কদর ছিল। বাড়িতে এসে পাইকাররা বায়না দিয়ে যেত। এখন আর সেই দিন নাই। আগে কামাই খুব হইত। কিন্তু এখন পেটই চলে না।

একই গ্রামের মৃৎশিল্পী শ্রী সুভাষ চন্দ্র পাল বলেন, এই ব্যবসা ব্রিটিশ আমল থেকে। জাত ব্যবসা হিসেবে ধরে আছি এখনো। কিন্তু বেচাকেনা কম, দিন যায়না।

মৃৎশিল্পী বিজয় চন্দ্র পাল বলেন, মাটির হাড়ি, পাতিল তৈরির কাজ করি আমরা। আগে আমাদের এ কাজ করে জীবিকা নির্বাহ হত।এখন আমাদের হিমশিম খেতে হয়। আমাদের এ ঐতিহ্য আমরা ধরে আছি।

পুরুষদের প্রধান কাজ মাটি কিনে সেগুলো কাদা করা ও ভাটায় পোড়ানো। এরপর এসব সামগ্রী নিজ হাতে তৈরি করেন বাড়ির নারী ও ছেলে মেয়েরা। আর এসব তৈরি সামগ্রী বাজারে বিক্রি করি আমরা। কিন্ত দিন দিন চাহিদা কমে যাওয়ায় এখন হাত পড়েছে কপালে।

মাটির সামগ্রী বিক্রি করা ধোদা সরকার বলেন, মাটির তৈরি থালা, হাঁড়ি, পাতিল, কলস, সারোয়ার এক সময় খুব চাহিদা ছিল। বাজারে আসার সঙ্গে সঙ্গে ক্রেতা সামলানোই কষ্টকর ছিল। এখন হাটে আসা যাওয়ার ভ্যান ভাড়াই তুলতে পারি না। আগে গরমে পানি রাখার একটি কলস বিক্রি হতো ৮০-১০০ টাকা। এখন ফ্রিজ বের হয়ে কলসের কোনো চাহিদা নাই। হঠাৎ এক-দুইটা বিক্রি হয়, তাও পানির দামে দিতে হয়।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার( ইউএনও) আসিফ আল জিনাত বলেন, ‘আমাদের ক্ষেতলাল উপজেলার দক্ষিণ হাটশহর এলাকায় প্রায় ৫০টির মতো পরিবার মাটির তৈজসপত্র উৎপাদনের সাথে সম্পৃক্ত রয়েছে।আমাদের সরকারি সহযোগীতা করার যে সুযোগটি রয়েছে। তারা যদি আমাদের কাছে আবেদন করে ,আমরা তাদের পাশে থাকার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা করবো। মৃৎশিল্প গ্রামবাংলার হাজার বছরের ঐতিহ্য। এই শিল্পকে টিকিয়ে রাখা আমাদের সকলের দায়িত্ব।’

এস আই পাভেল।

 

কোন মন্তব্য নেই

Ads Place