ফুলকপি চাষে লাভ হয়- দ্বিগুণ থেকে দশগুণ। এ সবজি চাষ করে কখনও লোকসান গুনতে হয় না। আরও মজার বিষয় হলো- এই সবজি চাষে পরিশ্রম, পুঁজি এবং সময় কম...
সফল ফুলকপি চাষী নুর ইসলাম জানান, প্রায় ৪০ বছর আগে এ এলাকায় প্রথম ফুলকপি চাষ শুরু করেন, সদরের রহমতপুর মহল্লার মনছের আলী। দু বছরের মধ্যেই তাঁর সাফল্য গাথা, পরস্পরের মুখে এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। অল্প পুঁজি খাটিয়ে সে সময় তিনি ভালো লাভবান হোন। তাঁর কাছ থেকে সব শুনে ৩৭ বছর আগে তিনিও এসবজি চাষে অনুপ্রাণিত হোন। সে বছরই এক বিঘা জমিতে ফুলকপি চাষ করেন। লাভ হয় খরচের থেকে ৫-৬ গুণ বেশি। তারপর থেকে নিয়মিত ১ থেকে দেড় বিঘা জমিতে এ সবজি চাষ করে আসছেন তিনি। আর কোন বছর এ সবজি চাষ বাদও দেননি।
কৃষক নুর ইসলাম আরও জানান, তাঁর কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে এই এলাকার অনেকেই এখন ফুলকপি চাষ শুরু করেছেন। দিন দিন বাড়ছে এ সবজির চাষ। এতে তাঁদের সুবিধাও বেড়েছে। ব্যবসায়ীরা তাঁদের কাছ থেকে পাইকারিতে ফুলকপি কিনেন। তারপর সেগুলো ট্রাকযোগে ঢাকা-চট্টগ্রাম সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সরবরাহ করেন।
জয়পুরহাট পৌরসভার দেওয়ানপাড়া মহল্লার মুকুল হোসেন এবং আদর্শপাড়া মহল্লার মজনু মিয়া জানান, আগে তাঁরা তাঁদের জমিতে দীর্ঘ মেয়াদি অন্যান্য ফসল চাষ করতেন। তাতে সময় শ্রম এবং পুঁজি বেশি লাগতো। কখনও লাভ হতো। কখনও গুনতে হতো লোকসান। ওইসব জমিতে এখন নুরুল ইসলামের দেখাদেখি ফুলকপি চাষ করছেন তাঁরা। এতে সময়, খরচ ও পরিশ্রম কম লাগছে। কিন্তু লাভ থাকতে কমপক্ষে দ্বিগুণ। কখনও কখনও খরচের দশ গুণ লাভবান হয়েছেন তাঁরা।
কৃষক নুর ইসলাম জানান, তিনি এবার তিনি কার্তিক মাসের শুরুতে (৩৩ শতক) এক বিঘা জমিতে মাউন্টেন এবং ব্রকলি জাতের ফুলকপি চাষ করেছেন। আর এক মাসের মধ্যেই ফসল তুলতে পারবেন তিনি। এ এক বিঘা জমিতে তাঁর সব মিলে খরচ হবে ১০ হাজার টাকা। ফসল বিক্রি করবেন ৪০ হাজার থেকে এক লাখ টাকায়। তঁর আশা খরচ বাদ দিয়ে তার লাভ থাকবে ৩০-৯০ হাজার টাকা।
ফুলকপি চাষের বিষয়ে নুর ইসলাম জানান, এর চাষ পদ্ধতি খুব সহজ। এজন্য প্রতি বিঘা জমিতে চাষের আগে- গোবর সার ৫০ কেজি, টিএসপি ৩০ কেজি, এমওপি ৩০ কেজি এবং ইউরিয়া ১০ কেজি ভালোভাবে ছিটিয়ে দিতে হয়। তারপর জমিটি কলের মেশিন দিয়ে চারটি চাষ করতে হয়। এতে মাটি ঝুরঝুরে হবে। এ মাটিতেই ২০ ইঞ্চি পর পর একটি করে কপির চারা লাগাতে হবে। চারা লাগানোর পরপরই চারার গোড়ায় সামান্য পানি দিতে হবে। চারা লাগানোর ১৫ দিন পরে কোদাল দিয়ে আগাছা পরিষ্কার করতে হবে। আর ২০-২৫ দিন পরে চারার গোড়ায় মাটি দিয়ে বাধাই করে দিতে হবে । বাধায় দেয়ার দু-তিনদিন পরে হালকা করে সেচ দিতে হবে। ৫০ দিন বয়সে চারায় ফুল দেখা দিবে। ৬০ দিনের মধ্যেই ফসল তোলা যাবে।
জয়পুরহাট জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা জুয়েল রানা জানান, জেলায় এ বছর সবজি চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ হাজার ৭০ হেক্টর জমিতে। এ পর্যন্ত অর্জন হয়েছে ২ হাজার ৭৯০ হেক্টর জমিতে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (পিপি) শহিদুল ইসলাম বলেন, 'কৃষকদের কোন কোন ফসলের উপরে প্রণোদনা দেওয়া হবে- সেই সিদ্ধান্ত সেন্ট্রালভাবে নেওয়া হয়। আমরা কৃষকদের বিভিন্ন পরামর্শ প্রদান করে থাকি। ফুলকপি চাষে অন্যান্য কৃষকদের আগ্রহী করার জন্য আমরা প্রদর্শনী দিয়ে সহযোগিতা করতে পারি।'
মো. আতাউর রহমান।
কোন মন্তব্য নেই