ওল কচু চাষে খরচ হয় কম। লাভ হয় প্রায় তিন গুণ। এমনকি পতিত জমিতেও এ ফসল চাষ করা যায়। তাই অল্প খরচে ওল কচু চাষ করে অধিক লাভের স্বপ্ন দেখছেন ...
জয়পুরহাট সদর উপজেলার কোমর গ্রামের কৃষক সাইফুল ইসলাম বলেন, স্থানীয় কৃষি বিভাগের পরামর্শে কন্দাল ফসল চাষ প্রকল্পের আওতায় আমি এবার বৈশাখ মাসের শেষার্ধে ২০ শতক জমিতে ওল কচু চাষ করেছি। জমি প্রস্তুত থেকে শুরু করে সার ও ওষুধ প্রয়োগ, চারা রোপন, জমির পরিচর্যা ও সেচ বাবদ এ পর্যন্ত আমার খরচ হয়েছে প্রায় ১০ হাজার টাকা। বীজ বপনের সাত থেকে আট মাসের মধ্যেই এ ফসল ঘরে ওঠে। সে হিসেবে অগ্রহায়ণ বা পৌষ মাসের মাঝামাঝি সময় এর ফসল তুলতে পারব। সে পর্যন্ত খরচ হবে আরও অন্তত ৫ হাজার টাকা। বিশ শতক জমিতে আমি ওল কচুর গাছ লাগিয়েছি ৪৫০টি। ফসল ঘরে তোলা পর্যন্ত ৫০ টি গাছ মরে গেলেও বেঁচে থাকবে ৪০০ টি। প্রতিটি গাছ থেকে ৬-৮ কেজি পর্যন্ত ওল পাওয়া সম্ভব বলে জানিয়েছেন কৃষি কর্মকর্তারা। সে হিসেবে আমার ফলন হওয়ার কথা ২ হাজার ৪০০ কেজি। খুচরা বাজারে ওল কচু ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও পাইকারিতে বিক্রি হয় অন্তত ৩০ টাকা কেজি দরে। সে হিসেবে পাইকারিতে বিক্রি করলেও আমি এ ফসল বিক্রি করে পাবো অন্তত ৭০ হাজার টাকা। তাতে সব খরচ বাদ দিয়ে আমার লাভ থাকবে অন্তত ৫০ হাজার টাকা। আমার বিশ্বাস, আমি কাঙ্ক্ষিত এ লাভের মুখ দেখতে পেলে; আগামীতে এ এলাকায় ওল কচুর চাষ আরও বাড়বে।
জয়পুরহাট সদর উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয় উন্নত জাতের কন্দাল ফসল চাষ প্রকল্পের আওতায় সদর উপজেলায় বেশ কিছু কৃষক এবার ওল কচু চাষ করেছেন। সদর উপজেলার ধলাহার ইউনিয়নের ধলাহার গ্রামের কৃষক নুরমোহাম্মদ এবং সদর উপজেলার আমদই ইউনিয়নের কিন্দুল গ্রামের কৃষক শ্রী সাগর বর্মন এবং বম্বু ইউনিয়নের কোমর গ্রামের কৃষক সাইফুল ইসলাম তাঁদের মধ্যে অন্যতম।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা জানান, ওলকচু সুস্বাদু হওয়ায় ক্রেতারাও পছন্দ করেন এ সবজিটি। এ বছর আবহাওয়া ভালো থাকায় কৃষকরা গাছ প্রতি ৭ থেকে ১০ কেজি পর্যন্ত ওলের ফলন পাবেন বলে আশা করা হচ্ছে । বাজারে ওলকচুর পাইকারি দাম পাবেন অন্তত ৩০ টাকা।
জয়পুরহাট সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কায়সার ইকবাল বলেন, ওল কচু চাষে খরচ হয় নামমাত্র। কিন্তু লাভ হয় দুই থেকে তিন গুণ। এই ওল কচু এমন একটি ফসল যাতে পোকা-মাকড়ের বালাই নাই। রোগ-বালাই কম। অনাবৃষ্টি বা খরার কবলে না পড়লে, সেচের প্রয়োজন হয় না। এমন কি গরু, ছাগলেও এ গাছ খায় না। পরিত্যাক্ত আধা ছায়া জায়গাতেও এটি হয়। অবশ্য রোদযুক্ত জায়গায় লাগানো গেলে, ফলন ভালো হয়। বাজারদর কম থাকলে, ফসল না তুললেও ক্ষতি হয় না। বরং দেরিতে তুললে ফলন আরো বাড়ে। আলু নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে না তুললে, জমিতে পচে নষ্ট হয়। কিন্তু ওল কচুর মাটির নিচে থাকলে আকারে বড় হয় কিন্তু নষ্ট হয় না। মোটকথা, ওল কচু চাষে লোকসানের আশঙ্কা নেই বললেই চলে। তাই জয়পুরহাটের কৃষকদের ওল চাষে আগ্রহী করার জন্য কৃষি বিভাগ নানা ভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এজন্য সদর উপজেলার দর্শনীয় স্থানে বেশ কিছু প্রদর্শনী প্লট এর ব্যবস্থা করা হয়েছে। এক কথাই ওল কচু চাষে রিস্ক বা ধরা খাওয়ার কোনো উপায় নেই। যাঁরা কৃষিকাজে নতুন আসছেন, তাঁদের জন্যও ওল চাষ নিরাপদ।
মো. আতাউর রহমান।
কোন মন্তব্য নেই