জয়পুরহাটে অবৈধ ভাবে কিডনি কেনাবেচা দালাল চক্রের আরও তিনজন সদস্যকে গ্রেফতার করেছে জেলা গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) সদস্যরা। গত বুধবারে কালাই উপজেল...
গ্রেপ্তার হওয়া তিনজন ব্যক্তি হলেন- জেলার কালাই উপজেলার সরাইল গ্রামের মৃত নজরুল ইসলামের ছেলে ফুল মিয়া রানা ওরফে জুয়েল (৪২), একই উপজেলার লক্ষ্মিচাপর গ্রামের আব্দুল কাদেরের ছেলে জুয়েল রানা (২৮) এবং মাত্রাই ইউনিয়নের ছত্রগ্রামের মোখলেছুর রহমানের ছেলে ফিরোজ হোসেন (৩৯)।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে জেলা পুলিশের কনফারেন্স রুমে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান পুলিশ সুপার মাসুম আহাম্মদ ভূঞা।
সংবাদ সম্মেলনে কিডনি বিক্রিতে প্রলুব্ধ হওয়া একজন রিকশাচালক ও কিডনি বিক্রি করে দেওয়া একজন তরুণকে উপস্থিত করা হয়। তাঁরা কিভাবে কিডনি বিক্রিতে প্রলুব্ধ হয়েছিলেন, সংবাদ সম্মেলনে সে গল্প শোনান তাঁরা।
লিখিত বক্তব্যে পুলিশ সুপার বলেন, 'কিডনি পাচার চক্রের বিরুদ্ধে জয়পুরহাটে পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে। অভিযানের অংশ হিসেবে গোপন সংবাদের ভিক্তিতে আমরা জানাতে পারি যে, কিডনি কেনাবেচা চক্রের অন্যতম গড়ফাদার ফুল মিয়া রানা ওরফে জুয়েল। তিনি উপজেলার পূর্ব সরাইল গ্রামের মৃত আব্দুস সাত্তারের ছেলে রায়হান মণ্ডল ও তাঁর স্ত্রী মোসলেমা বেগমকে নিয়ে চট্রগ্রামে যাবেন। চট্রগ্রামে বসবাসরত জনৈক ব্যক্তির নিকট তিনি কিডনি দেওয়ার জন্য ভিকটিম দুজনকে ভারতে নিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিবেন। এমন তথ্য জানার পর পরই কালাই উপজেলার পুনট বাসস্ট্যান্ড এলাকায় অভিযান চালিয়ে ওই দুজন ভিকটিমকে উদ্ধার করা হয়। আর একই সময়ে আসামীদেরকেও গ্রেপ্তার করা হয়।'
পুলিশ সুপার আরও বলেন, 'পরবর্তীতে আসামী ফুল মিয়াকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। সে সময় জানা যায় যে, কিডনি বেচাকেনা চক্রের দালাল ফুল মিয়া ইতোপূর্বে জেলার হিন্দা গ্রামের ভিক্টিম মো. লিটন, দুর্গাপুর গ্রামের মো. জাক্কা ও রাজুরকে ভারতে পাঠিয়ে দেন এবং তাঁদের কিডনি অপসারণ করান। আর জেলার পুনট ইউনিয়নের শান্তিনগরের বাসিন্দা ভিকটিম আনিছুর রহমান ও তাঁর স্ত্রী বর্তমানে ভারতে অবস্থান করছেন। তাঁদের কিডনি অপসারণ করানো হবে বলেও জানান তিনি। তাঁদের বিরুদ্ধে প্রচলিত আইনে মামলা রুজু প্রক্রিয়াধীন আছে। তাছাড়া এ চক্রের অন্যান্য সদস্যদের নাম-ঠিকানা সংগ্রহপূর্বক তাঁদেরকে গ্রেপ্তারের লক্ষ্যে অভিযান অব্যাহত আছে বলেও পুলিশ সুপার মাছুম আহাম্মদ ভুঞা জানান।
এসপি বলেন, 'কালাই উপজেলা বহুতি গ্রামের তরুণ রাজু হোসেন (২৫)। আড়াই মাস আগে ভারতে গিয়ে কিডনি দিয়েছেন। একই দালালেরা তাঁকে কিডনি বিক্রি করতে প্রলুব্ধ করেছিলেন।'
এদিকে সংবাদ সম্মেলনে রিকশাচালক রায়হান মণ্ডল বলেন, 'আমি ঢাকায় থেকে রিকশা চালাতাম। কারণ আমার সংসারে অভাব। আমার অভাবের সুযোগ বুঝে ফুল মিয়া ও তাঁর লোকজনেরা আমাকে কিডনি বিক্রিতে প্রলুব্ধ করেন। তাঁরা আমাকে সাড়ে চার লাখ টাকা দিতে চেয়ে অগ্রীম ত্রিশ হাজার টাকা দিয়েছেন। সে জন্য তাঁরা চট্রগ্রাম থেকে আমার পাসর্পোট করেছিলেন। ভিসাও প্রস্তুত হয়েছিল। কিন্তু চট্রগ্রাম যাওয়ার পথে আমাদেরকে ধরে ফেলে পুলিশ।'
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তরিকুল ইসলাম (পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত), অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফারজানা রহমান, সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার ইশতিয়াক আলম প্রমুখ।
মো. আতাউর রহমান।
কোন মন্তব্য নেই