Page Nav

HIDE

Grid

GRID_STYLE

Hover Effects

TRUE
{fbt_classic_header}

Header Ad

ব্রেকিং নিউজ

latest

Ads Place

শিক্ষিকা, নার্স ও ৭১ এর বিরাঙ্গনা ইদু মাস্টারনি এখন ভিক্ষুক

ইদু মাস্টারনি পাকিস্তান আমলে দিনাজপুর সদরে একটি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা ছিলেন। জেলা সদর হাসপাতালের নার্স হিসেবেও তিনি কাজ করতেন। ১৯৭১ সালে ...

ইদু মাস্টারনি পাকিস্তান আমলে দিনাজপুর সদরে একটি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা ছিলেন। জেলা সদর হাসপাতালের নার্স হিসেবেও তিনি কাজ করতেন। ১৯৭১ সালে পাক সেনাদের হাতে শারীরিক নির্যাতনের শিকারও হন তিনি। বীরাঙ্গনা না বললে খুবি ভুল হবে তাকে। মুক্তিযোদ্ধ তার কেড়ে নিয়েছে তিন ছেলে আর স্বামীকে। সব হারিয়ে আজ তিনি পাগল প্রায়, অন্যের দয়ায় বেঁচে আছেন তিনি। কিন্তু দেশ এবং দশ কোন খোঁজ রাখেনি এই শিক্ষিত ইদু মাস্টারনির।

ইদু মাস্টারনি ওরফে হাসিনা বানু একজন পুরনো শিক্ষিত মানুষ। স্বাধীনতার পূর্বে তিনি দিনাজপুর সদরে একটি উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষিকা ছিলেন। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন ইদু মাস্টারনি দিনাজপুর জেলা সদর হাসপাতালের নার্স হিসেবে কর্মরত ছিলেন। একজন শিক্ষিকা, নার্স আবার তিনি ছেলে-মেয়েদের টিউশনি করাতেন। মুলত একজন মহিলা মানুষ তিনটি কাজ করবে এটাই ছিলো তার অপরাধ।

১৯৭১ সালের এপ্রিল মাসের সম্ভাব্য তৃতীয় সপ্তাহে দিকে বিহারি রাজাকার ইদু মাস্টারনি ও তার ১১ ও ৮ বছরের ছেলেকে পাকবাহিনীর হাতে তুলে দেন। সেই সময় পাক সেনারা ছিলো বেপরোয়া। জ্বালাও পড়াও এবং মেতে ছিলো হত্যাকান্ডে। তখন ইদু মাস্টারনির অবুঝ দুটি শিশু সন্তানদের তার বুক থেকে ছিনিয়ে নেয় এবং তাদের হত্যা করতে থাকে। এসময় মা হাসিনা বানু সন্তানদের বাঁচাতে ঝাঁপিয়ে পড়ে। তখন নিঃষ্ঠুর পাকসেনারা তাদের রাইফেল দিয়ে হাসিনার মাথায় আঘাত করতে থাকে। পরে তাকে মৃত মনে করে ছেলেদের লাশের সাথে শহরের পাশে কাঞ্চন নদীর পাড়ে ফেলে দেয়। রাখে আল্লাহ মারে কে। হাসিনা প্রাণে বেঁচে যায়, আহত অবস্থায় তিনি কোন রকম তার ভাই-বোনদের কাছে ফিরে আসে। মূমুর্ষ অবস্থায় ভাই-বোন তাকে রাতের আঁধারে ভারতের বালুরঘাট হাসপাতালে ভর্তি করে রেখে আসে। পর হাসিনার স্বামী আর বড় ছেলে তার খোঁজে ভারতে যায়, দেখা হয়নি। হয় তো বা পথে মধ্যে তাদেরও পাকসেনারা হত্যা করেছে।

যুদ্ধ শেষ, দেশ স্বাধীন হয়েছে। স্বামী-সন্তান হারা সেই ইদু মাস্টারনি মানুষের সহযোগীতায় আবারও ভারত থেকে দিনাজপুর সদরে পাক-পাহাড়পুর গ্রামে ভাই-বোনদের নিকট ফিরে আসেন। তবে সুস্থ নই স্বরণ শক্তি লোভ পেয়েছে। মাথার ডান পাশে রাইফেলের আঘাতের ক্ষত স্থানে পচন ও পোকা ধরেছে। 

শুরু হয় হাসিনার কষ্টের জীবন, মা-বাবা, ভাই-বোনরা কোন রকম সুস্থ্ করে তুলেন তাকে। স্বাধীনতার পর থেকে কেউ খোঁজ রাখেনি এই ইদু মাস্টারনির। আজ স্বাধীনতার ৫০ বছর, সরকারি কোন সুযোগ-সুবিধা, মুক্তিযোদ্ধা ভাতা কিংবা বয়স্ক ভাতার কার্ড পাইনি এই স্বামী-সন্তান হারা অসহায় বীরাঙ্গনা ইদু মাস্টারনি।

দেখা যায়, দিনাজপুর সদর হাসপাতাল গেটের উত্তর পাশে লাইফ ফার্মেসীর সামনে দেখা মিলে একজন প্রায় ৮৫ বছর বয়সী বৃদ্ধাকে। একটি সুতি শাড়ি শরীরে জরানো।  গায়ে কোন জোর-শক্তি নেই, একটি লাঠির উপর ভর করে চলাচল করছেন। কারো সাথে কথা বলে না, কারো কাছে কিছু চাই না। কেউ খুশি মনে কিছু দিলে তবেই তিনি নেন। ইনি আর কেউ নই, সেই ইদু মাস্টারনি ওরফে হাসিনা বানু। মা-বাবা ভাই-বোন সবাই মারা গেছে, মানু নামের এক আপন ভাগনার বারান্দায় তিনি বসবাস করছেন বর্তমান। আর সকাল ৮ হলেই এই হাসপাতালের সামনে বসে থাকেন দুপুর ১ টা পর্যন্ত। স্বাধীনতার ৫০ বছর যাবৎ এখানে তিনি প্রতিদিন আসে এবং বসে থাকেন। হইতো বা জীবনের হারিয়ে যাওয়া স্মৃতিগুলো খুঁজে পাই এখানে তিনি।

সদর হাসপাতাল গেটের সামনে লাইফ ফার্মেসীর মালিক আফাছ উদ্দিন বলেন, আমি এখানে ৪১ বছর ধরে ঔষধের দোকান দিয়ে আসছি। তখন থেকেই এই বুড়ি মা আমার দোকানের সামনে বসে থাকে। তেমন কোন কথা বলে না, কারও নিকট কিছু চায়ে খায় না। প্রতিদিন সকালে আসলে আমি তার জন্য হোটেল থেকে পরটা আর চা নিয়ে আসি। 

আরও কয়েক জন স্থানীয়রা বলেন, আমরা প্রায় ১০ থেকে ১৫ বছর যাবৎ এখান দিয়ে চলাফেরা করি, প্রতিদিন সকাল করে দেখতে পায় এই বয়স্ক বুড়ি মাকে। এই মানুষটার ভিতরে যে এতো প্রতিভা বা গুন আছে আমরা তা আগে কখনও জানতাম না। 

ইদু মাস্টারনির ভাগিনা মনোয়ার আলি  মানু বলেন, আমার খালা একজন শিক্ষিত মানুষ। পাকিস্তান আমলে হাইস্কুলের শিক্ষক ছিলেন তিনি। আবার সদর হাসপাতালের নার্সও ছিলেন। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার দুই ছেলে সহ তাকে হত্যা করে নদীতে ফেলে দেয়। কিন্তু তিনি মারা যাননি। কোন রকম আমাদের বাড়িতে আসে। আমরা তখন তাকে ক্ষতবিক্ষত অবস্থায় ভারতের বালুরঘাট হাসপাতালে ভর্তি করি। আমার খালার দুনিয়াতে কেউ নেই, আমি তার দেখাশোনা করি। তবে এতো কি হারানোর পর এই অসহায় মানুষটিকে সরকার কিছুই দেয়নি।

এবিষয়ে দিনাজপুর জেলা সদর উপজেলার নির্বাহী অফিসার মর্তুজা আল মুঈদ বলেন, আমি ফেসবুকে এই ইদু মাস্টারনি, হাসিনার বানুর বিষয়টি দেখেছি। যুদ্ধে তার দুই ছেলে মারা গেছে। তার সন্ধানে সদর হাসপাতালে গিয়েছিলাম। তার বিষয়ে খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে। জেলা প্রশাসক স্যারের নিকট তার বিষয়ে আলোচনা করেছি। সরকারি ভাবে তাকে যত প্রকার সাহায্য সহযোগীতা করা দরকার তা করা হবে।

নিজস্ব প্রতিবেদক/ডেইলি জয়পুরহাট



কোন মন্তব্য নেই

Ads Place