কুষ্টিয়ার হার্ডিঞ্জ সেতুতে পাওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) মার্কেটিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র মাহবুব আলম ওরফে আদরের দাফন সম্পন্ন হয়েছে...
জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল পৌর এলাকার সাখিদার পাড়া মহল্লায় নামাজে জানাজা শেষে শুক্রবার তাঁকে পারিবারিক গোরস্থানে দাফন করা হয়েছে। আদরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহপাঠীসহ এলাকার মানুষেরা শরিক হয়েছিলেন জানাজায়।
নিহত ঢাবি শিক্ষর্থী মাহবুব আলম ক্ষেতলাল পৌর এলাকার সাখিদার পাড়া মহল্লার ব্যবসায়ী ও জয়পুরহাট জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান আব্দুল হান্নান ওরফে মিঠুর ছেলে। দুই ভাই বোনের মধ্যে সে বড়। মেধাবী এই শিক্ষার্থীর অকাল মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
নিহত আদরের ঢাবির সহপাঠীরা জানান, “মাহবুব আলম খুবই সহজ-সরল ছিল। সে ঢাবির হাজী মোহসিন হলের ই-৮ কক্ষে থাকত। কয়েক দিন আগে শরীয়তপুরে এক বন্ধুর বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিল সে। সেখান থেকে ফেরার সময় কুষ্টিয়ায় বেড়াতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। গত বুধবার বন্ধু এমরানের কাছ থেকে পাঁচশ’ টাকা নিয়ে বের হয়। ওই রাতে বঙ্গবন্ধু সেতুতে ট্রেনের ছাদের ওপর থাকা অবস্থায় মাহবুব আলম আদর তাঁর ফেসবুক অ্যাকাউন্টে সর্বশেষ একটি পোস্ট দিয়েছিলেন।”
“ওই পোস্ট অফ টু কুষ্টিয়া। কঠিন তবুও আনন্দঘন, মাঝপথে জুটেছিল অপরিচিত সঙ্গী। ট্রেনের ছাদে মাহবুব আলমের পেছনে অপরিচিত ওই ব্যক্তিকে দেখা গেছে। ঘটনার পর ওই ব্যক্তিকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। আদরের কাছে টাকা কম থাকলেও তাঁর কাছে দুটি দামি মুঠোফোন ছিল।”
সহপাঠী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের ছাত্র এমরান হোসেন বলেন, “মাহবুব আমার কাছে পাঁচশ’ টাকা নিয়ে বলেছিল সে কুষ্টিয়া যাবে। আমাদের বন্ধুরা কেউ তার সঙ্গে যায়নি। আমাদের ধারণা, মাহবুব খুব সহজ-সরল ছিল, সে ট্রেনের ছাদে ভ্রমণের ছেলে নয়। কেউ তার সরলতার সুযোগ নিয়ে ট্রেনের ছাদে তুলে নিয়ে দামি মুঠোফোনটি দুটি ছিনিয়ে নিতে হত্যা করতে পারে। কারণ, তার মাথার পেছনের আঘাতটি ধারালো অস্ত্রের বলে ধারণা করছি। আমরা মাহবুবের মৃত্যু রহস্য উদঘাটনের দাবি জানাচ্ছি।”
নিহত মাহবুবের মা মৌলুদা কাঁদতে-কাঁদতে বলেন, “বুধবার রাত নয়টার দিকে মুঠোফোনে মাহবুবের সঙ্গে আমার কথা হয়েছিল। সে তখন বলেছিল মা আমি কুষ্টিয়া যাচ্ছি। কার সঙ্গে যাচ্ছো বলতেই বলল অপরিচিত ব্যক্তির সঙ্গে। এরপর রাত বারোটায় আবার ফোন দিয়েছিলাম, রিসিভ করেনি। বৃহস্পতিবার সকালে খবর এল আমার আদর আর নেই। আমার ছেলে দুর্ঘটনায় মারা যায়নি। আমার ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে। আমার ছেলে ট্রেনের ছাদে একটি ছবি ফেসবুকে দিয়েছিল। ওই ছবিতে আমার ছেলের পেছনে একব্যক্তিকে দেখা গেছে। ওই ব্যক্তিকে খুঁজে পেলেই আমার ছেলের মৃত্যুর রহস্য উদঘাটন হবে।”
নিহতের বাবা আব্দুল হান্নান বলেন, “আমার ছেলে দুর্ঘটনায় মারা গেছে সেটি বিশ্বাস করতে পারছি না। আমার ছেলের মৃত্যুর রহস্য উদঘাটনের দাবি জানাচ্ছি।”
জয়পুরহাট জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আরিফুর রহমান রকেট বলেন, “আব্দুল হান্নানের একমাত্র ছেলে মেধাবী শিক্ষার্থী মাহবুব আলমের অকাল মৃত্যুতে আমরা সবাই শোকাহত। বাবার কাঁধে সন্তানের লাশ এটি সত্যিই বেদনাদায়ক। আমরা মেধাবী শিক্ষার্থী মাহবুব আলমের মৃত্যুর রহস্য উদঘাটনের দাবি জানাচ্ছি।”
এস এম শফিকুল ইসলাম।
কোন মন্তব্য নেই