এনজিও প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিয়ে কেনা ব্যাটারিচালতি রিকশা চুরি হওয়ার পর বেকায়দায় পড়া সেই চালক ফরিদ হোসেনকে রিকশার চারটি ব্যাটারি ও এনজিও ঋণসহ ৫...
এনজিও প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিয়ে কেনা ব্যাটারিচালতি রিকশা চুরি হওয়ার পর বেকায়দায় পড়া সেই চালক ফরিদ হোসেনকে রিকশার চারটি ব্যাটারি ও এনজিও ঋণসহ ৫০ হাজার দেওয়া হয়েছে।
রোববার (১৪ নভেম্বর) দুপুর ২টার দিকে ফরিদকে জেলা আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে তার হাতে রিকশার ব্যাটারি এবং ওই টাকা তুলে দেন জয়পুরহাট-২ আসনের সাংসদ ও জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন। এ সময় আরও দুজনের হাতে দুটি ভ্যান হস্তান্তর করেন তিনি।
এর আগে গত ৪ নভেম্বর দুপুরে জয়পুরহাট জেলা শহরের কেন্দ্রীয় মসজিদ মার্কেটের সামনের সড়ক থেকে ফরিদের রিকশাটি চুরি হয়ে যায়।
জানা গেছে, জয়পুরহাট পৌর শহরের নতুনহাট এলাকার বাসিন্দা ফরিদ হোসেন (৫৫) এনজিও থেকে ৩৮ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছিলেন। সংসারের খরচ এবং ঋণের টাকা দেওয়ার আশা নিয়ে সেই টাকা দিয়ে তিনি একটি রিকশা কেনেন। গত ৪ নভেম্বর দুপুরে এক যাত্রী নষ্ট টিভি মেরামতের জন্য শহরের কেন্দ্রীয় মসজিদ মার্কেটে আসার জন্য তার রিকশায় ওঠেন। তিনি কেন্দ্রীয় মসজিদ মার্কেটের সামনে এসে সড়কে রিকশাটি দাঁড় করিয়ে রেখে টিভি পৌঁছে দিতে যাত্রীর সঙ্গে মেকানিকের দোকানে যান। ফিরে এসে দেখেন তার রিকশাটি নেই।
অনেক খোঁজাখুঁজি করে ফরিদ তার রিকশাটি পাননি। রিকশা হারিয়ে শহরের নতুন হাট এলাকায় চিন্তায় বিষণ্ন মনে দাঁড়িয়ে থাকেন ফরিদ। লালন হোসেন নামের এক তরুণ রিকশা হারিয়ে ফরিদের বিষণ্ন মনে দাঁড়িয়ে থাকা ছবি ও রিকশা চুরির ঘটনার কথা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করেন। এরপর ছবিটি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে ভাইরাল হয়।
এ নিয়ে ৫ নভেম্বর ঢাকা পোস্ট-এ 'ঋণের টাকায় কেনা রিকশা চুরি, সংসার চালানোর চিন্তায় বিষণ্ন ফরিদ’ শিরোনামে একটি সচিত্র সংবাদ প্রকাশিত হয়। এর আগে ফেসবুকের ওই ছবি ও ঘটনা জেনে হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন জয়পুরহাটে তার বাসায় ফরিদকে আসতে বলেন। পরদিন ফরিদ তার বাসায় গেলে হুইপ তাকে নতুন রিকশা কিনে দেওয়ার কথা জানান। সঙ্গে আরও দুজনকে ভ্যান কিনে দেওয়ার জন্য টাকা দেন।
এরপর পুলিশ ফরিদের চুরি হওয়া রিকশাটি উদ্ধার করে। তবে রিকশাটিতে কোনো ব্যাটারি ছিল না। রোববার ফরিদ হোসেনকে ডেকে চারটি নতুন ব্যাটারি ও এনজিও ঋণসহ ৫০ হাজার টাকা দেওয়া হয়। এ সময় অন্য দুজন হুমায়ন ও সাইফুল ইসলামের হাতে দুটি ভ্যান হস্তান্তর করা হয়।
ফরিদ হোসেন বলেন, আমার চুরি হওয়া রিকশাটি উদ্ধার হয়েছে। তবে রিকশায় ব্যাটারি ছিল না। হুইপ মহোদয় আমাকে চারটি ব্যাটারি ও এনজিও ঋণ শোধের টাকা দিয়েছেন। রিকশাটি চুরি হওয়ায় আমার ক্ষতি হয়েছিল। হুইপ মহোদয় ক্ষতি পুষিয়ে দেওয়ায় আমার খুব ভালো লাগছে। আমি তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
জয়পুরহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ কে এম আলমগীর জাহান বলেন, ফরিদ হোসেনের চুরি হওয়া রিকশাটি ঘটনার পরদিনই উদ্ধার করা হয়েছিল। কিন্তু রিকশার ব্যাটারি ছিল না। রিকশা চোরকে শানাক্ত করা হয়েছে এবং শিগগিরই তাকে গ্রেফতার করা হবে।
এ সময় সময় উপস্থিত ছিলেন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আরিফুর রহমান রকেট, সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন মন্ডল, সহসভাপতি গোলাম হাক্কানী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও জয়পুরহাট পৌরসভার মেয়র মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তাক, তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক মোস্তাক কবির তুহিন, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক এ ই এম মাসুদ রেজা, জয়পুরহাট সদর উপজেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক ও দোগাছী ইউপি চেয়ারম্যান জহুরুল ইসলাম প্রমুখ।
চম্পক কুমার।
কোন মন্তব্য নেই