এক সময় আমদানি নির্ভর হিসেবে পরিচিত দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর এখন রপ্তানি বাণিজ্যের সম্ভাবনাময় কেন্দ্রে পরিণত হচ্ছে। চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের...
এক সময় আমদানি নির্ভর হিসেবে পরিচিত দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর এখন রপ্তানি বাণিজ্যের সম্ভাবনাময় কেন্দ্রে পরিণত হচ্ছে।
চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জুলাই থেকে নভেম্বর, এই চার মাসে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ৪২৯টি ট্রাকে মোট ১০ হাজার ৭৬২ মেট্রিক টন দেশীয় পণ্য ভারতে রপ্তানি হয়েছে। রপ্তানিকৃত পণ্যের মধ্যে রয়েছে দেশীয় কোম্পানির বিস্কুট, ফার্নিচার, প্লাস্টিক পাইপসহ বিভিন্ন শিল্পজাত পণ্য।
বন্দর সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, রপ্তানির পাশাপাশি আমদানিও আগের তুলনায় উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমে এই গতি ফিরে আসায় বন্দরের শ্রমিক, চালক, ব্যবসায়ী ও সংশ্লিষ্ট সব পেশাজীবীদের মধ্যে কর্মচাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে।
হিলি কাস্টমস সূত্রে জানা যায়, চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত সময়ে এই বন্দর দিয়ে চার মাসে ভারত থেকে ৯ হাজার ৩৮৪টি ট্রাকে মোট ৩ লাখ ৩৪ হাজার ৪৯৩ মেট্রিক টন পণ্য আমদানি হয়েছে। এসব পণ্য থেকে সরকারের রাজস্ব আদায় হয়েছে ২২৩ কোটি ৭ লাখ টাকা।
অন্যদিকে, আগের ২০২৪-২৫ অর্থবছরের একই সময়ে ভারত থেকে ৮ হাজার ৪৮৭টি ট্রাকে ২ লাখ ২৫ হাজার ৮৭৪ মেট্রিক টন পণ্য আমদানি হয়েছিল, যেখান থেকে সরকারের রাজস্ব আয় ছিল ২৬৫ কোটি টাকা।
হিলি স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, গত অর্থবছরে এই বন্দর দিয়ে রপ্তানি কার্যক্রম প্রায় শূন্যের কোঠায় ছিল। তবে চলতি অর্থবছরে দেশীয় বিভিন্ন পণ্য ভারতে রপ্তানি শুরু হওয়ায় বন্দর কার্যক্রমে নতুন গতি এসেছে। একই সঙ্গে গত অর্থবছরের তুলনায় ভারত থেকে পণ্য আমদানিও বেড়েছে।
আমদানি-রপ্তানি বৃদ্ধি পাওয়ায় কর্মব্যস্ততা বেড়েছে বন্দরের শ্রমিকদের। বন্দরের শ্রমিক রকিও আলম জানান, বর্তমানে তাদের কাজের কোনো অভাব নেই। তারা বলেন, সকাল ৯টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত কাজ করতে হয়। গত বছর প্রায়ই কর্মহীন থাকতে হয়েছে। দিনে ১০০ টাকাও আয় করা যেত না। এখন দিনে ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা পর্যন্ত আয় করতে পারছি। এতে সংসার চালাতে কষ্ট হচ্ছে না।
ট্রাক চালক সাব্বির ও তালেব জানান, কয়েক মাস ধরে হিলি স্থলবন্দরে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম বেড়েছে। এতে গাড়ি ভাড়াও বৃদ্ধি পেয়েছে। তারা বলেন, প্রতিদিন গাড়ি ভাড়া হচ্ছে। আমাদের আয় যেমন বেড়েছে, তেমনি ট্রাক মালিকরাও লাভবান হচ্ছেন।
হিলি কাস্টমসের রাজস্ব কর্মকর্তা মো. আব্দুল আজিজ বলেন, হিলি স্থলবন্দরে বর্তমানে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম স্বাভাবিক রয়েছে। চলতি অর্থবছরে অন্য বছরের তুলনায় রপ্তানি বেড়েছে। একই সঙ্গে ভারতীয় পণ্যের আমদানিও বৃদ্ধি পেয়েছে। ভারত থেকে আদা, রসুন, কাঁচামরিচ, পেঁয়াজ ও মটরশুঁটির মতো পচনশীল পণ্য আমদানি হয়। এসব পণ্য দ্রুত ছাড়করণের জন্য কাস্টমসের সব কার্যক্রম দ্রুততার সঙ্গে সম্পন্ন করা হচ্ছে।
সার্বিকভাবে হিলি স্থলবন্দরের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমে এই অগ্রগতি দিনাজপুরসহ আশপাশের এলাকার অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
মোকছেদুল মমিন মোয়াজ্জেম।

কোন মন্তব্য নেই