জয়পুরহাটের কালাইয়ে বাঙালি সংস্কৃতির অন্যতম নবান্ন উৎসব উপলক্ষে মাছের মেলাকে কেন্দ্র করে এলাকাবাসীর মধ্যে ব্যাপক আনন্দ-উৎসব বিরাজ করছে। স্থা...
জয়পুরহাটের কালাইয়ে বাঙালি সংস্কৃতির অন্যতম নবান্ন উৎসব উপলক্ষে মাছের মেলাকে কেন্দ্র করে এলাকাবাসীর মধ্যে ব্যাপক আনন্দ-উৎসব বিরাজ করছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এক দিনের মাছের মেলার অপেক্ষায় থাকেন এ উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামের মানুষেরা। ক্যালেন্ডার নয়, পঞ্জিকা অনুসারে প্রায় বিশ বছর ধরে চলছে মেলাটি। প্রতি বছরের মতো এবারও নবান্ন উপলক্ষে বসা জামাই মেলায় বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ আসছেন মাছ কিনতে। বোয়াল, গ্লাসকার্প, রুই, সিলভার কার্প, কাতলা, মৃগেলসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ দিয়ে পসরা সাজায় ব্যবসায়ীরা।
মঙ্গলবার (১৮ নভেম্বর) ভোর থেকেই কালাই পৌরসভার পাঁচশিরা বাজারে বসা রকমারি দোকানগুলোতে চলছে মাছ বেচা-কেনার ধুম। এ এলাকার জামাইয়েরা মেলার বড় বড় মাছ কিনে নিয়ে যায় শশুর বাড়ি।
মেলায় ঢুকেই সারি সারি দোকানগুলোতে চোখে পড়ে মন-জুড়ানো সব মাছের পসরা। দূরদূরান্ত থেকে বিক্রেতারা এসেছেন মাছ বিক্রির জন্য। দোকানগুলোতে থরে থরে সাজানো মাছগুলো প্রায় সবই বড় আকারের। মেলায় ছোট মাছ নেই বললেই চলে। আছে বড় বড় রুই, কাতলা, মৃগেল, সিলভার কার্প সহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ।আকারভেদে ৪০০ থেকে ১৫০০ টাকায় প্রতি কেজি মাছ বিক্রি হচ্ছে। মাছের মেলাকে কেন্দ্র করে উপজেলাসহ ২০-২৫টি গ্রাম-মহল্লার মানুষের মাঝে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা যায়। এলাকার সব শ্রেণি-পেশার মানুষ সাধ্য অনুযায়ী তার পছন্দের মাছ কিনে বাড়ি ফিরে। মেলা উদযাপন করতে আসেন জামাই-মেয়েসহ আত্মীয়-স্বজনরা।
মেলায় মাছ কিনতে আসা আব্দুন নুর নাহিদ, হেলাল, হোসেন আলী, আজমল হোসেন, পরিমল কর্মকার, প্রকাশ মহন্ত, সোহেল রানা সহ অনেকের সাথে কথা হয়। তারা জানান, নবান্ন উৎসবকে কেন্দ্র করে বসা মাছের মেলায় প্রচুর আমদানি সত্ত্বেও দাম হাকা হয় অনেকটা বেশি। স্বর্ণ ব্যবসায়ী পরিমল কর্মকার এসেছেন তার মেয়েকে নিয়ে। তিনি একটি কাতলা মাছ কিনেছেন ৫ হাজার টাকা দিয়ে। নজরুল ইসলাম এসেছেন নাতি-নাতনীকে নিয়ে। ৮ হাজার টাকায় একটি ব্ল্যাক কার্প মাছ কিনেছেন। মেয়ে-জামাইসহ নিকট আত্মীয়দের দাওয়াত করেছেন। সবাইকে নতুন চালের ভাত এবং মাছ খাওয়াবেন বলে জানান তিনি।
মাছ ব্যবসায়ীরা জানান, গত বছরের তুলনায় এবার মাছের দাম খুব বেশি। মাছের মেলায় প্রচুর লোক সমাগম হলেও বেচা-কেনা সে তুলনায় কম। তারপরও বেশি লাভেরই প্রত্যাশা করছেন তারা।
নবান্ন উৎসব উপলক্ষ্যে মাছের মেলার ইজারাদার আব্দুল আলিম জানান, ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্যে দিয়ে জামাই মেলাটি উপভোগ করা হয়। বড় বড় মাছ বেচা-কেনা হচ্ছে। আগামীতে মেলার পরিধি আরও বাড়বে বলে আমি আশাবাদী।
কালাই উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা তৌহিদা মোহতামিম জানান, কালাই পৌরসভার পাঁচশিরা বাজারে হাট কমিটি থেকে প্রতিবছর মাছের মেলার আয়োজন করে থাকে। এটা শুধু মাছ বিক্রি নয় আনন্দ উৎসবও বটে। কালাই মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ দপ্তর থেকে মাছের মেলায় সার্বক্ষণিক নজরদারি রাখা হচ্ছে।
মো: মোছাদ্দেকুল ইসলাম/কালাই

কোন মন্তব্য নেই