দিনাজপুরের বিরামপুরে দীর্ঘ ২৩ বছর ধরে শিক্ষকতা করেও এমপিওভুক্ত না হওয়ায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন আব্দুল হামিদ নামের এক নিবেদিতপ্রাণ শিক্ষক। শ...
দিনাজপুরের বিরামপুরে দীর্ঘ ২৩ বছর ধরে শিক্ষকতা করেও এমপিওভুক্ত না হওয়ায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন আব্দুল হামিদ নামের এক নিবেদিতপ্রাণ শিক্ষক। শিক্ষকতার মতো গুরুত্বপূর্ণ পেশায় যুক্ত থেকেও নিয়মিত বেতন না পেয়ে আজ তিনি জীবিকার প্রয়োজনে রাস্তার ধারে পশুখাদ্য ঘাস ও কাঠালের পাতা বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন। যা স্থানীয়দের চোখে অত্যন্ত বেদনাদায়ক এক বাস্তবতা।
বিরামপুর উপজেলার দুর্গাপুর উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৯৩ সালে। বিদ্যালয়ের সূচনালগ্নে কেরানি হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন আব্দুল হামিদ। চাকরির পাশাপাশি তিনি উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএজিএড সম্পন্ন করে ২০০২ সালে কৃষি বিষয়ে সহকারী শিক্ষক পদে যোগদান করেন। এর পর থেকে গত দুই দশকের বেশি সময় তিনি স্কুলের সেবা দিয়ে আসছেন নিষ্ঠা ও সততায়।
২০০৭ সালে প্রথম এমপিওর জন্য আবেদন করলেও বিদ্যালয়ের নারী কোটা পূরণ না হওয়ায় তার আবেদন বাতিল হয়। পরবর্তীতে বিভিন্ন নিয়োগনীতির জটিলতায় পরপর নয়বার আবেদন করেও এমপিওভুক্ত হতে পারেননি তিনি।
ফলে প্রায় তিন দশক শিক্ষকতা করেও আজ পর্যন্ত কোনও নিয়মিত বেতন পাচ্ছেন না তিনি।
সংসার চালাতে এখন রাস্তার ধারে ঘাস, কাঠালের পাতা ও পশুখাদ্যের অন্যান্য সামগ্রী বিক্রি করছেন আব্দুল হামিদ। তবুও শিক্ষকতার প্রতি তার আত্মনিবেদন অটুট। নিয়মিত স্কুলে যান, ক্লাস নেন এবং শিক্ষার্থীদের হোমওয়ার্ক পরীক্ষা করেন।
আবেগঘন কণ্ঠে আব্দুল হামিদ বলেন, দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষকতা করছি, কিন্তু এমপিও না হওয়ায় নিয়মিত কোনো বেতন পাই না। সংসার চালাতে বাধ্য হয়ে ঘাস ও পাতা বিক্রি করছি। তবুও স্কুলের দায়িত্ব পালন করি নিয়মিত। আমার ন্যায্য প্রাপ্যটি একদিন পাবো, এই আশাতেই আছি।
দুর্গাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মতে, আব্দুল হামিদ তাদের সবচেয়ে প্রিয় ও নিবেদিত শিক্ষক।
তারা বলেন, স্যার খুব ভালো পড়ান। নিয়মিত স্কুলে আসেন। এত বছরেও স্যার এমপিও না হওয়া আমাদের কাছে বড় অন্যায় মনে হয়। আমরা চাই তাকে দ্রুত এমপিওভুক্ত করা হোক।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাজমুল হক বলেন, নিবেদিতপ্রাণ একজন শিক্ষক হয়েও জীবিকার তাগিদে তাকে ঘাস বিক্রি করতে হচ্ছে। এটা জাতির জন্য লজ্জাজনক। দ্রুত তার এমপিও অনুমোদনের ব্যবস্থা হওয়া উচিত।
বিরামপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার জানান, তার সব কাগজপত্র সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি কর্তৃপক্ষ গুরুত্বসহকারে দেখবে বলে আমরা আশাবাদী।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, একজন শিক্ষকের এমন বাস্তবতা শুধু দুঃখজনক নয়, বরং শিক্ষাব্যবস্থার জন্য বড় প্রশ্নবিদ্ধ বিষয়।
তাদের বক্তব্য, একজন শিক্ষক পরিবারের দায়িত্ব পালন করতে ঘাস বিক্রি করবেন, এটা কোনোভাবেই কাম্য নয়। যত দ্রুত সম্ভব তাকে এমপিওভুক্ত করা হোক। এতে তার দীর্ঘদিনের কষ্ট লাঘব হবে।
একজন শিক্ষক শুধুমাত্র পেশাজীবী নন, তিনি সমাজ গঠনের কারিগর। সেই কারিগর যদি ন্যায্য প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত হন, তাহলে ক্ষতিগ্রস্ত হয় সমগ্র সমাজ কাঠামো। আব্দুল হামিদের মত দায়িত্বশীল শিক্ষকের বাস্তবতা পরিবর্তনে দ্রুত প্রয়োজন কার্যকর উদ্যোগ, এই দাবি জানাচ্ছেন শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও স্থানীয়রা।
মোকছেদুল মমিন মোয়াজ্জেম।

কোন মন্তব্য নেই