জয়পুরহাট জেলা আলু উৎপাদনের জন্য প্রসিদ্ধ। এ জেলায় উৎপাদিত আলু দেশের চাহিদা মিটিয়ে, বিদেশে রপ্তানি করা হয়। জেলা বিভিন্ন এলাকায় ইতোমধ্যে আগ...
জেলা বিভিন্ন এলাকায় ইতোমধ্যে আগাম জাতির আলো লাগানো শেষ হয়েছে। এখন চলছে অন্যান্য জাতের আলু লাগানোর মরা মৌসুম। তবে এবার আলুর বীজ এবং সারের দাম বেশি হওয়ায়- আবাদ ও গত বারের তুলনায় কিছুটা কমেছে। এখন সেই আলুতেই আগামী দিনের স্বপ্ন বুনছেন কৃষকরা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা জুয়েল রানা জানান, এবার জেলায় আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৮ হাজার ৩৬৫ হেক্টর জমিতে। গত ২১ নভেম্বর, সোমবার পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রার শতকরা ৪১ ভাগ অর্থাৎ ১৫ হাজার ৭৩০ সেক্টর জমিতে ইতোমধ্যে আলু রোপণের কাজ শেষ হয়েছে। আগামী ১৫ থেকে ২০ দিনের মধ্যে বাকি আলু রোপণের কাজ শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (শস্য) মজিবুর রহমান বলেন, 'গত বছরের চেয়ে এবারে প্রায় ৩ হাজার হেক্টর কম জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। অর্থাৎ গত বছর এ লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমিতে। আর এবার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৮ হাজার ৩৬৫ হেক্টর জমিতে। এর কারণ, কৃষকদের আমরা আলুর পাশাপাশি সরিষা চাষে উদ্বুদ্ধ করছি। সে উদ্দেশ্যে সরিষা চাষের জন্য আমরা কৃষকদের প্রনোদনাও দেয়েছি। উদ্দেশ্য সরিষা বেশি চাষ হলে, ভোজ্য তেলের উৎপাদন বাড়বে।'
সরেজমিন দেখা গেছে, মাঠে মাঠে চাষিরা এখন আলু রোপণে ব্যস্ত সময় পার করছেন। কেউ চাষ দেওয়ার আগে, জমিতে জৈব এবং রাসায়নিক সার ছিটিয়ে নিচ্ছেন। কেউ কেউ মেসি বা পাওয়ার টিলার দিয়ে আলু রোপনের জন্য জমি প্রস্তুত করছেন। কেউবা রোপণ করছেন আলু। আবার কেউ জমিতে সেচ দিচ্ছেন।
জয়পুরহাট সদরের কয়রাপাড়া গ্রামের কৃষক মিলন রহমান বলেন, 'এবার হামি মাত্র এক বিঘা জমিতে এ্যাস্টেরিক জাতের আলু চাষ করিচি। প্রতি বস্তা আলুর বীজ কিনিচি ২ হাজার ৪০০ ট্যাকায়। সারও কিনিচি চড়া দামে। গত বছরের চেয়ে এবার বিঘা প্রতি ৫-৬ হাজার ট্যাকা বেশি খরচ হওচে। আলু তোলার মৌসুমে, দাম ধানের মতন এনা বেশি প্যালে, ধার-দেনাগুলা শোধ করা পারনুহিনি।'
একই গ্রামের মোশাররফ হোসেন বলেন,
'হামি এবার ছয় বিঘা জমিতে গ্রানোলা জাতের আলু লাগাচি। বাড়ির বীজ। তাই খরচ কেচুটা কম হচে। হামার প্রতি বিঘায় খরচ পরবে ২০ হাজার ট্যাকা। বীজ কিনা লাগলে প্রতি বিঘায় খরচ হতো ২৪-২৫ হাজার ট্যাকা।'
জেলার কালাই উপজেলার হারুঞ্জা গ্রামের কৃষক লুৎফর রহমান বলেন, 'এবার আলু লাগিয়েছি অনেক আশা, অনেক স্বপ্ন নিয়ে। ফলন ও দাম ভাল পাওয়া গেলে, আলু বিক্রি করে মেয়েকে ভালো একটা চাকরি নিয়ে দিব। না হয় ভাল ঘর-বর দেখে বিয়ে দিয়ে দিব।'
সদর উপজেলার কিন্দুল গ্রামের গফুর মোল্লা বলেন, 'এবার আলু চাষে খরচ হওচে বেশি। ব্যবসায়ীরা চালাকি করে, চড়া দামে সার আর বীজ ব্যাচোচে। তেলের দামও বেশি। তাই এবার সবমিলিয়ে খরচ বেশি হওচে। শেষমেশ লাভ হোবে, না লোকসান হোবে বোঝোচিনা।'
মো. আতাউর রহমান।
কোন মন্তব্য নেই