'ওএমএসের চাউল পায়ে মোর অনেক উপকার হোচে। ওই চাউল যখন থেকে দেচে, তখন থেকেই লেচি। হামরাই সাত জন মানুষ। এক সংসারে খাই। রোজগার করে একজন। একদ...
'ওএমএসের চাউল পায়ে মোর অনেক উপকার হোচে। ওই চাউল যখন থেকে দেচে, তখন থেকেই লেচি। হামরাই সাত জন মানুষ। এক সংসারে খাই। রোজগার করে একজন। একদিন পরপর পরিবার প্রতি ৫ কেজি করে চাউল দেয়। কিন্তু হাতত্ সব সময় ট্যাকা থাকে না। কারণ, এখন রোজগার ভালো হচেনা। যা রোজগার, তারচে খরচই বেশি হওচে। বাজারত চাউলের দাম বেশি। শাকসবজির দামও বেশি। তাই ট্যাকা বাঁচাতে 'ওএমএস' এর চাউল কিনি।
জন্য যখনই হাতত্ ট্যাকা হয়, তখনই যায়ে ৫ কেজি করে 'ওএমএস' এর চাউল লিয়ে আসি। ' কথাগুলো বলেন, জয়পুরহাট পৌরসভার সাত নম্বর ওয়ার্ডের বাবুপাড়া মহল্লার বাসিন্দা শেফালী বেগম। কেবল শেফালী বেগমই নয়। একই সুরে কথা বলেন, একই মহল্লার- খুরশিদা বেগম, মাসুদা বেগম, কুলসুম বেওয়া, রত্না আক্তারসহ অনেকে।
জানা গেছে, নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠীকে সহায়তা দেয়া এবং বাজার দর স্থিতিশীল রাখতেই এই ওএমএস' এর চাল বিক্রিয় কার্যক্রম শুরু হয়েছে। জয়পুরহাট সদর পৌরসভার ৫ জনসহ পাঁচবিবি, কালাই, ক্ষেতলাল ও আক্কেলপুর পৌরসভার ২০ জন ওএমএস ডিলার প্রতিদিন ২ মে.টন করে মোট ৪০ মে.টন চাল বিক্রয় করছেন। সপ্তাহে ৫ দিন ( শুক্রবার ও শনিবার ব্যতীত ) সকাল ন'টা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত ওএমএস ডিলাররা এ চালগুলো বিক্রিয় করছেন। ওএমএস ডিলাররা প্রতিকেজি ৩০ টাকা দরে সাধারণ ক্রেতা এবং টিসিবি কার্ডধারীদের কাছে এ চালগুলো বিক্রয় করছেন।
বাজারে চাল, ভোজ্য তেল, মাছ, মাংস, ডিম, শাকসবজিসহ নিত্যপণ্যের দাম বেশি। তাই রোজগারের সঙ্গে ব্যয়ের সংগতি রাখা অনেকেই পক্ষেই কষ্টকর হয়ে পড়েছে । উদ্ভূত পরিস্থিতিতে, নিম্নবিত্তদের সঙ্গে মধ্যবিত্তরাও ভিড় করছেন ওএমএসের দোকানে । তবে বরাদ্দের পরিমাণ চাহিদার তুলনায় অনেক কম । এ জন্য আড়াইটা থেকে তিনটের মধ্যেই অনেক ডিলারের দোকানে বরাদ্দকৃত চাল বিক্রি শেষ হয়ে যায়। তখন অনেকেই চাল না পেয়ে হতাশ হয়ে বাড়িতে ফিরে যান। এ জন্য বরাদ্দ আরো বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন অনেক ভুক্তভোগী।
জয়পুরহাট পৌরসভার বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ওএমএসের চাল কিনতে এসেছিলেন আসলাম আকন্দ তিনি বলেন, আমার ৫ জনের সংসার। রোজগার করি আমি একাই। যাঁরা শ্রমজীবী, প্রতিদিন কাজ করে, প্রতিদিন খায়; ভালো আছেন তাঁরা। মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম নিয়ে আমরা আছি বেকায়দায়। পারি না অন্যের বাড়িতে কাজ করতে। পারিনা রিকশা-ভ্যান ভটভটি চালাতে। বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় সব জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে। আমাদের ইনকাম বাড়েনি। তাই সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছি। ৩০ টাকা কেজিতে একদিন পরপর ৫ কেজি করে চাল পাওয়া যাচ্ছে। এতে উপকার হচ্ছে। তবে আরও বরাদ্দ বাড়ানো দরকার।
জয়পুরহাট চিনিকল এলাকার 'এফ' টাইপ কলোনির বাসিন্দা মঞ্জুয়ারা বেগম বলেন, আমার স্বামী আজহার আলী জয়পুরহাট সুগার মিলে চাকরি করেন। তিনি যে টাকা বেতন পান, তা দিয়ে ৬ জনের সংসার চালাতে কষ্ট হয়। মাস শেষে টাকা সঞ্চয় করতে পারিনা। বরং প্রতিমাসেই ধারদেনা করে চলতে হয়। তাই শুরু থেকেই আমরাও ৩০ টাকা কেজির 'ওএমএসে'র চাল নিয়মিত কিনছি।
জয়পুরহাট পৌরসভার তাজুরমোড় মহল্লার বাসিন্দা সিরিয়া রবিদাস (৬৭) বলেন, দেশে এখন নীরব দুর্ভিক্ষ চলছে। কন্ট্রোলের (ওএমএসের) চাল না পাওয়া গেলে, অনেককেই না খেয়ে থাকতে হতো। কম দামে চাউল পাওয়ায় কিছু টাকা বেঁচে যাচ্ছে। কিন্তু নিত্যপ্রয়োজনীয় সব পণ্যের দাম না কমালে আমাদের অস্বস্তি কমবে না।
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক জ্ঞানপ্রিয় বিদূশী চাকমা বলেন, প্রতিদিন সকাল ন'টা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত 'ওএমএস' ডিলারের বিক্রয় কেন্দ্রগুলো থেকে সাধারণ ক্রেতা এবং টিসিবি কার্ডধারীরা চাল সংগ্রহ করতে পারবেন। প্রতি ডিলারের জন্য প্রতিদিন ২ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ থাকে। বরাদ্দের চাল শেষ না হওয়া পর্যন্ত ডিলারকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত দোকান খোলা রাখতে হবে। কোন ডিলার দূর্নীতি-অনিয়ম করছেন কিনা- তা আমাদের লোক নিয়মিত তদারকি করছেন।
মো. আতাউর রহমান।
কোন মন্তব্য নেই