১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু গণপরিষদে বলেছিলেন, আমাদের সংবিধান বিশ্বে অনন্য। আমরা সংবিধানে গনতন্ত্র ও সমাজতন্ত্র দুটিই রেখেছি। আমরা গনতান্ত্রিক উপায়ে...
১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু গণপরিষদে বলেছিলেন, আমাদের সংবিধান বিশ্বে অনন্য। আমরা সংবিধানে গনতন্ত্র ও সমাজতন্ত্র দুটিই রেখেছি। আমরা গনতান্ত্রিক উপায়ে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করব। যেখানে বাংলাদেশের নাগরিক সকল প্রকার অর্থনৈতিক শোষণ থেকে মুক্ত থাকবেন এবং সম্পত্তির সুষম বণ্টন হবে।
১৯৭৪ সালে বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমেদ লন্ডন সফরে থাকার সময় লন্ডনের একটি পত্রিকায় বাংলাদেশের দুটি ছবি পাশাপাশি ছাপা হয়। একটি ছবিতে ছিল একজন ভূখার চর্মসার ছবি এবং অন্যটিতে তারকা হোটেলে গোটা মুরগী সহ শরাব পানের ছবি। তাজউদ্দীন আহমেদ চরম ক্ষুব্ধ হন। দেশে এসে সংবাদ সম্মেলন করে বলেন, দেশের সম্পদের সুষম বণ্টন করার সময় এসেছে। অন্যথায়, এমন অবস্থার উন্নতি হবে না।
কিন্তু দূর্ভাগ্যবশত গত ৫০ বছরে সম্পত্তির সুষম বণ্টন হয় নি। খাস জমি ভূমিহীনদের মাঝে বণ্টন করে দেবার প্রতিশ্রুতি ছিল আমাদের পূর্বপুরুষদের। প্রয়াত প্রেসিডেন্ট জেনারেল এরশাদ খাস ভূমির বণ্টনের উদ্যোগ নিলেও তা আর সফলতার মুখ দেখেনি।
বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় বেড়েছে। জনগণের জীবনযাত্রা মান তুলনামূলক ভাবে উন্নত হয় নি। গণপরিষদে বলা হয়েছিল, বাংলার মানুষ মাটি আঁকড়ে থাকতে পছন্দ করে। তাই তাদের কাছ থেকে মাটি নিয়ে বৃহৎ খামারের দিকে যাওয়া যাবেনা। বঙ্গবন্ধুর বাকশাল সম্ভবত সফল না হবার এটিও অন্যতম কারণ। তাই সুপারিশ করা হয়েছিল, আয়ের একটি উর্ধ্বসীমা নির্ধারণের। উদ্বৃত্ত অর্থের সুষম বণ্টন করার লক্ষ্য ছিল সংবিধান প্রণেতাদের।
গত কয়েক মাস থেকে বাজারে দ্রব্যপন্যের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। সাধারণ মানুষের নাগালের বাহিরে চলে যাচ্ছে নিত্য প্রয়োজনীয় পন্যের মূল্য। টিসিবি পন্যের লাইন দীর্ঘতর হচ্ছে দিন দিন। সরকারী হিসেব অনুসারে মুদ্রাস্ফীতি সহনীয় পর্যায়ে থাকার পরেও পন্যের এমন মূল্যবৃদ্ধি অসহনীয় হয়ে উঠেছে জনগণের কাছে। যদিও বড় হচ্ছে জিডিপির আকার এবং মাথাপিছু আয়ের পরিমাণ। তাই প্রশ্ন উঠেছে, মাথাপিছু আয়ে সাধারণ নাগরিকের অংশ কোথায়?
দেশে দারিদ্রের বর্তমান হার ২০.৫ শতাংশ। তবে ২০২১ সালের শেষের দিকে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি) এবং ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বিআইজিডি) যৌথ গবেষণা বলছে, করোনার কারণে দেশে নতুন করে ২২.৯ শতাংশ মানুষ গরিব হয়েছে। নতুন ও পুরনো মিলিয়ে জনসংখ্যার প্রায় ৪৩ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে গেছে। অর্থাৎ, গরিব মানুষের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে সাত কোটির বেশি।
করোনা পরবর্তী দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি বিপাকে ফেলেছে দেশের এই সাত কোটি মানুষকে। তাদের জীবন যাপনের মান নিম্নমুখী হয়েছে দিনকে দিন। তাই সময় এসেছে দেশের অর্থনীতি নিয়ে ভাবার এবং সম্পদের সুষম বণ্টনের দিকে নজর দেবার। সম্পদ ও সম্পত্তির সুষম বণ্টনই পারে এই সাত কোটি মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে।
এ্যাডভোকেট নাফিউৎজামান তালুকদার, আইনজীবী জজকোর্ট ঢাকা।
কোন মন্তব্য নেই